শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার গ্রেপ্তার হলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য ঘনিষ্ট তাপস মণ্ডল। সিবআই সূত্রে খবর, কবিবার তাঁকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হয়। এরপরই তাঁকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই। সিবিআই সূত্রে এও জানানো হয় যে, নিজাম প্যালেসে তাঁকে একাধিক বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।আর তখনই ধরা পড়ে নানাঅসঙ্গতি। কেবলমাত্র তাপস মণ্ডলই নয়, এদিন গ্রেপ্তার করা হয় এই নিয়োগ দুর্নীতি মামলার আরও এক এজেন্ট নীলাদ্রি ঘোষকেও। গ্রেপ্তারির পর তাপস মণ্ডল জানান, তাঁকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনি জানেন না। প্রসঙ্গত, এর আগে ইডির সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে নাম ছিল তাপসের। কিন্তু তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি। সিবিআই রবিবার তাঁকে গ্রেপ্তার করল। এদিকে সিবিআই সূত্রে খবর, রবিবার সকালে নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠানো হয় মানিক ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডলকে।এরপর এদিন সকাল ১১টা নাগাদসিবিআই দফতরে পৌঁছন তিনি।এরপর তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে জেরা। টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁকে।সিবিআই সূত্রে খবর, এদিন বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ তাপসকে গ্রেপ্তার করা হয়। একইসঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার আরেক এজেন্ট, যাঁর নাম বারবার কুন্তল ঘোষের মুখে শোনা গিয়েছে, সেই নীলাদ্রি ঘোষকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তবে গ্রেপ্তার করার পরই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে তাঁরে মেডিক্যাল চেক আপের পর ফের নিজাম প্যালেসে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই জেরা শুরু হবে তাপসের। শুধু তাপস-ই নয়, এদিন মেডিক্যাল চেক-আপহয় নীলাদ্রি ঘোষেরও। সিবিআই সূত্রে খবর, প্রয়োজনে দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়েও জেরা করা হতে পারে। নিয়োগ দুর্নীতিতে এই তাপস মণ্ডলের নাম উঠে আসে মানিক ভট্টাচার্য গ্রেপ্তার হওয়ার পরই। এর আগেও একাধিকবার তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিল ইডি এবং সিবিআই এবং দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সম্প্রতি এই দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের মুখেও শোনা গিয়েছিল তাপস মণ্ডলের নাম। চাকরিপ্রার্থীদের থেকে বেআইনিভাবে টাকা নেওয়ার কারবারিতেও তিনিও যুক্ত বলে বিস্তর অভিযোগ ওঠে। তাপস তদন্তকারীদের বলেছিলেন, তাঁর অফিস থেকে টাকা নিয়ে এজেন্টরা পৌঁছে দিতেন কুন্তলের কাছে। সেই কুন্তলই আঙুল তুলেছিল তাপসের দিকে। তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত আর্থিক লেনদেনের বৃহত্তর চক্রের সন্ধান পেতে চাইছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। তাপস মণ্ডলের এদিনের এই গ্রেপ্তারি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে অনেকেই মনে রছেন কারণ, সেই তাপস মণ্ডল, যাঁর হাত ধরে কুন্তল ঘোষ থেকে গোপাল দলপতি সকলেরই নাগাল পেয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে এমনটাও জানা যাচ্ছে যে, তৃণমূলের যুবনেতা কুন্তল ঘোষকে ইডির গ্রেফতারি ইস্তক যে সমস্ত তথ্য সামনে উঠে এসেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তদন্তকারীদের ‘ক্লু’ দেওয়ার কাজ করেছেন তাপস। সেই তাপসই এবার সিবিআইয়ের জালে। সূত্রের খবর, বারবার তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে তদন্তকারীদের মনে হয়েছে, চাকরি ‘চুরি’র একটা অংশকে তাপস দিনের আলোয় তুলে ধরলেও, একটা অংশ আঁধারেই লুকিয়ে রাখছেন। সেই বিষয়গুলো নিয়ে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করেও জবাব না মেলায় এদিন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।