হোলির মুখে গুজবের জেরে তামিলনাড়ু ছাড়ার হিড়িক বিহারের বাসিন্দাদের

হোলির মুখে তামিলনাড়ু ছাড়ার হিড়িক ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের। যার মধ্যে রয়েছেন মূলত বিহারের বাসিন্দারা। আর এই ঘরে ফেরার জেরে রীতিমতো হিমসিম খেতে হচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষকে। এর পিছনে রয়েছে তামিলনাড়ুতে বিহারের শ্রমিকদের উপর হামলার অভিযোগ। এই প্রসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, বিহারবাসী শ্রমিকদের উপর হামলার খবর প্রকাশ্যে আসতেই এই নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনার পর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ভিন রাজ্যের শ্রমিকরা। এর পরই তামিলনাড়ু ছাড়ার পরিকল্পনা করেন তাঁরা। আর সেই কারণেই দূরপাল্লার ট্রেনগুলিতে ভিড় উপচে পড়ছে বলে অনুমান রেল ও রাজ্য প্রশাসনের। তবে তামিলনাড়ু প্রশাসন সূত্রে খবর, এই গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে পদক্ষেপ করছে সরকার। এদিকে এই ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। এই ইস্যুতে রবিবারই টুইট করে তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবি। টুইটে তিনি হিন্দি এবং ইংরাজি দুই ভাষাতেই জানান, ‘ভিন রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। তামিলনাড়ু সরকার তাঁদের নিরাপত্তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ এদিকে সূত্রে খবর, গত শনিবার এই ইস্যুতে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে কথা বলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিন। ভিনরাজ্যের শ্রমিকরা তামিলনাড়ুর সম্পূর্ণ নিরাপদেই রয়েছেন বলে আশ্বাস দেন তিনি। যদিও এই ইস্যুতে ডিএমকে-কে খোঁচা দিতে ছাড়েননি এআইডিএমকে নেতা ও পানিরসেলভাম। তিনি টুইটে লেখেন, ‘ভিন রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের নিরাপত্তা দেওয়া রাজ্যের কর্তৃব্য। যা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে স্ট্যালিন সরকার।’

এদিকে এই গুজবের জেরে শনি এবং রবিবার এই গত দু’দিন ধরে তামিলনাড়ু থেকে ছাড়া দূরপাল্লার ট্রেনগুলিতে উপচে পড়ছে ভিড়। রেল সূত্রে খবর, হোলির কারণে ফি-বছর এই সময় এমনিতেই যাত্রীদের চাপ থাকে। তামিলনাড়ুতে কাজ করতে আসা শ্রমিকরা ছুটি নিয়ে বাড়িতে যান। কিন্তু এবছর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। সূত্রের খবর, টিকিট না পেয়ে অনেকেই ট্রেনের আপৎকালীন জানালা ধরে ঝুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। যা রীতিমতো উদ্বেগ বাড়িয়েছে রেল ও স্থানীয় প্রশাসনের। এদিকে আরপিএফ সূত্রে খবর, গত রবিরবার চেন্নাই সেন্ট্রালের মতো স্টেশনে ভিড় উপচে পড়ে। তামিলনাড়ুর এই স্টেশন থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার অধিকাংশ দূরপাল্লার ট্রেন ছাড়ে। মাত্রাতিরিক্ত ভিড় সামলাতে গিয়ে রীতিমতো নাকানি-চোবানি খেতে হয় আসপিএফকে।

এই ঘটনায় তামিলনাড়ুতে থাকা বিহারের বাসিন্দাদের একাংশ জানান, ‘তামিলনাড়ুতে দীর্ঘদিন ধরে আমি কাজ করছি। এখানে মাসে ২০ হাজার টাকা রোজগার হয় আমার। কিন্তু ওই ঘটনার পর আমাকে বাড়িতে ফিরতে বলেছেন পরিবারের সদস্যরা।’ তবে এর পাশাপাশি তাঁরা এও জানান, তামিলনাড়ুতে কাজে ফিরবেন তাঁরা। অন্যদিকে এই গুজব ঠেকাতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে তামিলনাড়ু সরকার। ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের বোঝানোর কাজ শুরু করেছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিরা।

এদিকে চেন্নাইয়ে বিহার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মুকেশ ঠাকুর জানান, ‘দু’দিন আগেই একটি রেস্তোরাঁ থেকে খবর পাই, সেখানকার প্রায় শতাধিক শ্রমিক তামিলনাড়ু ছেড়ে পালাতে চাইছেন। খবর পেয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করি আমরা। সবাইকে নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হয়। আপাতত রাজ্য ছাড়ছেন না তাঁরা।‘

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen + 2 =