পুলিশের কবজা থেকে পালাতে গিয়ে মৃত্যু ধিঙে নাবালিকা-ধর্ষণকাণ্ডের মূ অভিযুক্ত তফাজ্জুল

নগাঁও (অসম) : পুলিশের কবজা থেকে পালিয়ে জলাশয়ে ঝাঁপ দিয়ে সলিলসমাধি হয়েছে নগাঁও জেলার অন্তর্গত ধিং বিধানসভা এলাকার এক নাবালিকাকে দলবদ্ধ ধর্ষণকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মূল অভিযুক্ত তফাজ্জুল ইসলামের। ঘটনা আজ শনিবার ভোররাত প্রায় চারটা নাগাদ সংঘটিত হয়েছে।

নগাঁওয়ের পুলিশ সুপার স্বপ্ননীল ডেকা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিকালের দিকে ধিঙের বাসিন্দা দশম শ্ৰেণির এক ছাত্ৰী প্রাইভেট টিউশন থেকে বাড়ি আসার পথে তিন বাইক-আরোহী তাকে অপহরণ করে নির্জন জঙ্গলে নিয়ে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। এর পর সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মেয়েটিকে রাস্তার পাশে জঙ্গলে ফেলে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে খুঁজে উদ্ধার করে প্রথমে ধিং এফআরইউতে নিয়ে যান। সেখানে তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর বলে ডাক্তাররা রেফার করেন নগাঁওয়ে ভোগননী ফুকননী সিভিল হাসপাতালে। বৰ্তমানে ছাত্ৰীটি নগাঁও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ঘটনার পর গোটা নগাঁও জেলা সহ রাজ্যজুড়ে নাবালিকা-ধর্ষকদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ওঠে। সৃষ্টি হয় তীব্র প্রতিক্রিয়ার।

এদিকে গতকাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা ধিঙে ধর্ষণের মতো অপরাধজনিত ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ ব্যক্ত করে বলেন, সেখানে অসমের আদি বাসিন্দা অসমিয়ারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। অসমে যে কোনও অপরাধী তথা ধর্ষকদের আসকারা দেওয়া হবে না। নাবালিকাকে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের খুব শীঘ্রই গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি বলেছিলেন, ‘যে সব অঞ্চলে ভুমিপুত্ৰ অসমিয়ারা সংখ্যালঘু হয়ে গেছেন, সে সব স্থানে ধিঙের মতো ধর্ষণজনিত অপরাধ বেড়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই প্রকৃত শত্রুদের চিহ্নিত করে কড়া হাতে দমন করতে হবে।’

মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা আরও বলেছিলেন, ‘জঘন্য ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ধরনের নৃশংসতা মোকাবিলা করতে যথেষ্ট আইন রয়েছে। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।’

অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্ৰীর নির্দেশে গতকাল শুক্রবার সকালে ধিঙে ছুটে গিয়েছিলেন পরিষদীয় মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা এবং রাজ্যের পুলিশ-প্রধান (ডিজিপি) জ্ঞানেন্দ্ৰপ্ৰতাপ সিং। মন্ত্রী এবং ডিজিপির উপস্থিতিতে বিভিন্ন দল-সংগঠনের প্ৰতিনিধিবর্গ ধিঙে গিয়ে জঘন্য ঘটনার বিরুদ্ধে প্ৰতিবাদ করে অপরাধীদের শীঘ্র গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তির দাবি করে অবস্থান-ধরনা সংগঠিত করেছিলেন।

পুলিশ সুপার স্বপ্ননীল ডেকা জানান, গতকাল শুক্রবার দুপুরের দিকে দলবদ্ধধর্ষণ মামলার তিন আসামির মধ্যে তফাজ্জুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার মূল অভিযুক্ত তফাজ্জুলের পর পুলিশ বাকি দুই অপরাধীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

তিনি জানান, ধৃত তফাজ্জুলকে গ্রেফতারের পর তদন্তের স্বার্থে আজ ভোররাতে তাকে সংগঠিত স্থানে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। ভোররাত প্রায় চারটা। তখন সে পুলিশের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে রাস্তার পার্শ্ববর্তী কানায় কানায় ভরতি একটি জলাশয়ে ঝাঁপ দেয়। বহুক্ষণ তাকে খুঁজে না পেয়ে ডেকে পাঠানো হয় এসডিআরএফ-কে। প্রায় দু-ঘণ্টা তালাশি অভিযান চালিয়ে তফাজ্জুল ইসলামের মৃতদেহ উদ্ধার করে এসডিআরএফ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × two =