জগন্নাথ ধাম প্রকল্প নিয়ে ফের মমতাকে তোপ শুভেন্দুর

কলকাতা : “কোনও সরকার ও তাদের অধীনস্থ সংস্থা ধর্মীয়স্থল নির্মাণে করদাতাদের অর্থ ব্যয় করতে পারে না।” বৃহস্পতিবার এই মন্তব্য করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একহাত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

শুভেন্দুবাবু লিখেছেন, “আপনি যদি মনে করে থাকেন যে আপনার প্রচেষ্টায় পুরীর জগন্নাথ ধামের মাহাত্ম্য সামান্য হলেও কমবে অথবা আপনি বিকল্প তীর্থক্ষেত্র স্থাপন করে ফেললেন, তাহলে মহাপ্রভু জগন্নাথ দেব আপনাকে সুবুদ্ধি প্রদান করুন এই প্রার্থনা করি।

‘জয় জগন্নাথ’ এবং গেরুয়া ছোট ত্রিকোণ পতাকার ছবি দিয়ে শুরু করে শুভেন্দুবাবু মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে এক্সবার্তায় লিখেছেন, “আপনি দাবী করছেন যে আপনার সরকারের বিশেষ প্রচেষ্টায় পুরীর শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দিরের আদলে দিঘায় তৈরি হচ্ছে জগন্নাথ মন্দির এবং এই মন্দির নির্মাণ করতে ইতিমধ্যেই প্রায় ২৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

কিন্তু আপনার দাবি ও বাস্তবের সাথে বিস্তর ফারাক আছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল হাউজিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (ডব্লুবিহিডকো)-র টেন্ডার ও কাজের বরাতের নথিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে টেন্ডার আহ্বান করার সময় কাজটি “জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্র” হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই নথি যা আমি আবার জন সমক্ষে তুলে ধরলাম। এটা প্রমাণ করে যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার মন্দির নির্মাণ নয়, বরং একটি “সাংস্কৃতিক কেন্দ্র” তৈরি করছে। কারণ ভারতের সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় হোক অথবা রাজ্য হোক, যে কোনও সরকার ও তাদের অধীনস্থ সংস্থা ধর্মীয়স্থল নির্মাণে করদাতাদের অর্থ ব্যয় করতে পারে না।

কেউ যদি মনে করেন যে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের খরচ কেন্দ্রীয় সরকার বা উত্তর প্রদেশ সরকার বহন করেছে, তাহলে তারা ভুল ভাবছেন। শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্ট বিশ্বজুড়ে হিন্দুদের থেকে অনুদান দিয়ে রাম মন্দির নির্মাণ করেছেন, সরকারি অর্থে নয়।

দ্বিতীয়ত, মাননীয়া আপনি যদি মনে করেন যে পুরীর শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দিরের আদলে মন্দির নির্মাণ করে দিঘায় তীর্থক্ষেত্র স্থাপন করে ফেললেন, তাহলে আপনাকে বলি উৎকলের শ্রীক্ষেত্র; পুরীর জগন্নাথ ধাম সনাতন ধর্মের অন্যতম পীঠস্থান। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জগন্নাথ অবতারে পুরীর মন্দিরে অধিষ্ঠান করেন, সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের বড় ভাই বলভদ্র এবং ছোট বোন সুভদ্রাও একই আসনে অধিষ্ঠান করেন। কয়েক শতাব্দী পূর্বে নির্মিত অলৌকিক এই মন্দিরের সঙ্গে কত আশ্চর্যজনক ঘটনা জড়িত তার ব্যাখ্যা বিজ্ঞান ও দিতে ব্যর্থ। যেমন মন্দিরের চূড়ায় যে ধ্বজা লাগানো থাকে, সবসময় যে দিকে হাওয়া চলে তার বিপরীত দিকে ধ্বজাটি ওড়ে।

জগন্নাথ দেবের মন্দির প্রায় ৪ লক্ষ বর্গফুট এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এবং ২১৪ ফুট উঁচু, অথচ এই মন্দিরের চূড়ার কোনও ছায়া দেখা যায় না। মন্দিরের চূড়ায় একটি চক্র লাগানো রয়েছে, যে কোনও প্রান্ত থেকে ওই চক্রের দিকে তাকান, মনে হবে চক্রটি আপনার দিকেই ঘোরানো। চক্রটির ওজন প্রায় এক টন। ১২ শতকে মন্দির নির্মাণের সময় চূড়ায় কিভাবে বসানো হয়েছিল, তা এক রহস্য, কারণ সেই সময় প্রযুক্তি কতটা উন্নত ছিল তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

জনশ্রুতি, লোকগাথা, পৌরাণিক কাহিনী ও ইতিহাসের আবরণে মোড়া ভারতবর্ষের সংস্কৃতি, আত্মাধিক ও ধর্মীয় চেতনার সাথে সমার্থক সনাতনী পীঠস্থান যেমন কেদারনাথ, বদ্রীনাথ, তিরুপতি বালাজি, কামাখ্যা, কাশী বিশ্বনাথ, দ্বারকাধীশ, কৈলাস, পদ্মনাভস্বামী, বৈষ্ণো দেবী, সিদ্ধি বিনায়ক, তুঙ্গনাথ, ত্রিপুরেশ্বরী, অমরনাথ, মহাকালেশ্বর, পুরীর জগন্নাথ ধাম… এর মতো প্রাচীন ধর্মীয় তীর্থক্ষেত্রের অনুকরণ হয়তো করা যায় কিন্তু তার বিকল্প তৈরি করা যায় না। কোনো মানুষের ক্ষমতাই নেই পীঠস্থান তৈরী করার।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 − 5 =