“নির্বাচনী কর্মকর্তাকে হুমকি দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী, গণতন্ত্র বিপন্ন”—কঠোর পদক্ষেপের দাবি শুভেন্দু অধিকারীর।

কলকাতা : পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে “অশোভন, হুমকিসূচক ও সাংবিধানিক সীমা লঙ্ঘনকারী” বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, এখনই কেন্দ্রীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ একান্ত জরুরি।

শুভেন্দু অধিকারী বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী কর্মকর্তারা আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তাদের প্রতি হুমকির সুরে কথা বলছেন—যা দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। গতকাল তিনি মুখ্য সচিবের উপস্থিতিতে মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আশা করি তিনি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না বা আঘাতপ্রাপ্ত হবেন না।’ এটি নিছক মন্তব্য নয়, এটি একটি স্পষ্ট হুমকি।”

বিরোধী দলনেতার দাবি, মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মূল কর্মকর্তাকে এভাবে অপমান করে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নষ্ট করতে চাইছেন। তিনি বলেন, “এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগেও ২০২৫ সালের জুলাইয়ে বলপুরে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী বুথ স্তরীয় কর্মকর্তাদের প্রকাশ্যে বলেছিলেন—‘একজনও নাম বাদ দেবেন না, নতুবা তার ফল ভোগ করতে হবে।’ এই ভাষা কোনও গণতান্ত্রিক শাসকের হতে পারে না।”

শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, “সম্প্রতি বন্যা-পীড়িত এলাকায় সাহায্য করতে যাওয়া এক আদিবাসী সাংসদকে প্রকাশ্যে মারধর করা হয়েছে। পুলিশ উপস্থিত থেকেও নীরব ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর নীরবতা প্রমাণ করে, তিনি এই অরাজকতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন।”

বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি, আক্রমণ ও রাজনৈতিক হুমকির ঘটনা ক্রমে বাড়ছে—যা সংবিধানবিরোধী এবং নির্বাচন কমিশনের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করছে। তিনি বলেন, “এখনই যদি কেন্দ্রীয় সরকার ও নির্বাচন কমিশন কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, ভবিষ্যতের নির্বাচনও বিপন্ন হবে। সময় এসেছে, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার।”

তিনি আরও যোগ করেন, “গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ রক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় কমিশনের দৃঢ় অবস্থান অপরিহার্য। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন যাতে ভয়, হুমকি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে অনুষ্ঠিত হয়, সেই দায়িত্ব এখন কেন্দ্রীয় প্রশাসনের।”

শেষে শুভেন্দু অধিকারী স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “এখন সময় এসেছে অরাজকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুমকি-রাজনীতির শেষ না হলে, বাংলার গণতন্ত্র টিকে থাকবে না।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − 11 =