‘হাতে ভারতীয় পতাকা থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছি’

বাঙ্কারের মধ্যে থেকে শুধু জল আর বিস্কুট খেয়ে কেটেছে প্রায় সাত দিন। ঘন ঘন বোমার শধ শিউরে উঠতে হয়েছে চিকিৎসক পড়ুয়া ছাত্রদের। সঙ্গে যদি ভারতীয় পতাকা না থাকত, তাহলে হয়তো কফিনবন্দি লাশ হয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ফিরতে হত তাঁকে। শুক্রবার ইউক্রেন থেকে ফিরে মালদার কালিয়াচকের বাড়িতে বসে সমস্ত অভিজ্ঞতার কথা জানালেন চিকিৎসক পড়ুয়া নুর হাসান। ইউক্রেনের ভিনিতসিয়া শহর থেকে রোমানিয়া বর্ডার পর্যন্ত যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের কি সমস্যায় পড়তে হয়েছে, সে কথা বলার সময় শিউরে উঠেছেন মালদার বিদেশ ফেরত ওই চিকিৎসক পড়ুয়া ছাত্র। তার সঙ্গে নাইজেরিয়া, জর্জিয়া, আয়ারল্যান্ড সহ আরও বেশ কিছু দেশের সহপাঠীরা ছিলেন। প্রাণ বাঁচাতে তারাও ভারতের জাতীয় পতাকাকে সামনে তুলে ধরেছিলেন। তার জেরেই কোনওরকমে রোমানিয়ার সীমান্তে এসে পৌঁছতে পেরেছিলেন ইউক্রেনে থাকা মালদার ওই চিকিৎসক পড়ুয়া ছাত্রী ও তার সহপাঠীরা। তবে তাদের সঙ্গে ইউক্রেনের পুলিশ চরম দুর্ব্যবহার করেছে। আর সেই সব অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়েও চোখ ছলছল হয়ে গিয়েছে কালিয়াচকের ইউক্রেনে পড়তে যাওয়া চিকিৎসক পড়ুয়া নুর হাসানের।

নুর হোসেনের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কালিয়াচক থানার মূল শহর কালিয়াচকের একটি রাস্তার সামনে বাড়ি রয়েছে নুর হাসানের। তার বাবা হাসিদুর রহমান, পেশায় পরিবহণ ব্যবসায়ী। পরিবারে তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে হাসিদুর রহমানের। নুর হাসান বাড়ির ছোট। ২০১৯ সালের ইউক্রেনের ভিনিতসিয়া ন্যাশানাল মেডিক্যালের ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পায় নুর হাসান। এবছর তিনি তৃতীয় বর্ষে পাঠরত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার রাতে বিমানে করে দমদমে ফেরে কালিয়াচকের ওই চিকিৎসক পড়ুয়া নুর হাসান। এরপরই রাতে ট্রেন ধরে সরাসরি মালদার কালিয়াচকের বাড়িতে ফিরে সে। সকালে পরিবারের লোকেদের সঙ্গে বসে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের নানা অভিজ্ঞতার কথা আলোচনা করতে গিয়েই বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে আসে।

ওই চিকিৎসক পড়ুয়া নুর হাসান বলেন, ভিনিতসিয়া শহরে বেশ কয়েকটি দেশের সহপাঠীরা একসঙ্গে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলাম। যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েক দিন পর থেকেই আমাদের শহরের বুক চিড়ে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর দাপাদাপি শুরু হয়। তখনই বুঝতে পারি দেশ ছাড়তে হবে। কিন্তু ততক্ষণে ইউক্রেনের বিমান ঘাঁটিগুলি মিসাইলের ধাক্কায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ভারত সরকার যতক্ষণ না পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে, ততক্ষণ আমরা ওই বাড়ির একটি বাঙ্কারে মধ্যেই আশ্রয় নিয়েছিলাম। সঙ্গে ছিল শুধু পানীয় জলের বোতল আর বিস্কুট।

ওই চিকিৎসক পড়ুয়া নুর হাসান আরও বলেন, কিভাবে দেশে ফিরব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। পরে যখন জানতে পারি আমাদেরকে এই শহর থেকে রোমানিয়া সীমান্ত পর্যন্ত যে কোনওভাবেই পৌঁছতে হবে। এই শহর থেকে রোমানিয়ার সীমান্তের দূরত্ব প্রায় ১১ কিলোমিটার। গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেঁটে সেই সীমান্তে গিয়ে পৌঁছয়। আমার সঙ্গে বেশ কয়েকটি দেশের সহপাঠীরা ছিলেন। কিন্তু জীবন বাঁচাতে আমি এবং আমার সহপাঠীদের হাতে ছিল ভারতীয় পতাকা। তাই গায়ে কেউ আঁচড় দিতে পারেনি। তবে  ইউক্রেন পুলিশদের যখন রাস্তায় দেখা মিলেছিল। সহযোগিতা চেয়ে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। এরপর কোনওক্রমে রোমানিয়া সীমান্তে পৌঁছলেও সেখানে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এরপরই অন্যান্য ভারতীয় চিকিৎসক পড়ুয়াদের সঙ্গে আমিও দেশে  ফিরতে পারি।

ছেলেকে কাছে পেয়ে রীতিমতো খুশিতে কেঁদে ফেলেছেন নুর হাসানের পরিবার। তার বাবা হাসিদুর রহমান বলেন, ছেলেকে আর বাইরে পাঠাব না। ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে এর থেকে আর খুশির কিছু হতে পারে না।  ও এখানেই থাকবে। ডাক্তারি পড়া শেষ ইচ্ছাটা ছেলে এখানেই সম্পন্ন করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven + 13 =