শনিবার বিলকিসের আবেদন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট । কারণ হিসেবে শীর্ষ আদালতের তরফ থেকে যা জানানো হয়েছে তা হল, ধর্ষকদের মুক্তির সিদ্ধান্ত গুজরাত সরকার সরকারের আওতাধীন। মে মাসে এই রায় দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। সেই রায়ের পুনর্বিবেচনার আর্জি জানান বিলকিস। শনিবার সেই আবেদন খারিজ করেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অজয় রস্তোগি এবং বিচারপতি বিক্রম নাথের বেঞ্চ।
সূত্রে খবর, ১৯৯২ সালের সাজা মকুব করার নিয়মের আওতায় ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। চলতি বছরের মে মাসের সেই সিদ্ধান্তের জেরেই অগাস্ট মাসে ১১ জন ধর্ষকদের মুক্তি দেয় গুজরাত সরকার। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আরজি জানিয়ে আবেদন করেন বিলকিস। তবে বিলকিস একা নন, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য একাধিক আবেদন জমা পড়ে শীর্ষ আদালতে। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও একই আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু এদিন সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কাই খেলেন বিলকিস।
ধর্ষকদের মুক্তি পাওয়ার ঘটনায় বিলকিস এও জানিয়েছিলেন, তিনি হতবাক। এদিকে পিটিশনেও বলা হয়েছিল, গোটা দেশ যখন স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে, তখন সব অপরাধীদের আগাম মুক্তি দেওয়া হয়। প্রকাশ্যে তাদের সংবর্ধনা জানিয়ে মালা পরানো হয়। মিষ্টি বিতরণ করা হয়। তাতেই বিলকিস তথা দেশ ও দুনিয়া জানতে পারে যে জঘন্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্তদের আগাম মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের কাছে এই মামলার শুনানির আবেদন করেন বিলকিসের আইনজীবী। তবে তাঁর আবেদনে ইতিবাচক সাড়া মিলল না।
২০০২ সালে গুজরাতে দাহোড়ে গণধর্ষণ করা হয় অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানোকে। খুন করা হয় তাঁর শিশুকন্যা সহ পকিবারের আরও ১৪ জনকে। এরপর এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় ১২ জনকে। তবে বিচারপর্ব চলাকালীন একজনের মৃত্যু হয়। মুম্বইয়ের আদালতে ১১ অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনায় আদালত। এরপর দীর্ঘদিন কারাবাসের পর মুক্তির আবেদন জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন এক দোষী। এদিকে গুজরাত হাই কোর্ট জানায় যেহেতু মামলার শুনানি মহারাষ্ট্রে হয়েছিল, তাই এ সিদ্ধান্তের জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যে আবেদন করতে হবে। এরপর মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে । এই মামলাতেই গত ১৩ মে বিচারপতি অজয় রস্তোগি এবং বিচারপতি বিক্রম নাথের বেঞ্চ জানায় দোষীদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি গুজরাত সরকারের এক্তিয়ারে পড়ে। এরপর ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিন ছাড়া পান বিলকিস মামলার দোষীরা। এই ঘটনায় বিতর্কে উত্তাল হয় দেশ। তবে বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। ছাড়া পাওয়া দোষীদের ‘সংস্কারী ব্রাহ্মণ’ বলে দাবি করে বিতর্কে জড়ান স্থানীয় পদ্মশিবিরের নেতা।