সুরক্ষা কবচ দিল না সুপ্রিম কোর্ট, বিড়ম্বনায় পর্ষদ সভাপতি গৌতম

সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হয়েও রক্ষা কবচ পেলেন না প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল ও ডেপুটি সেক্রেটারি পার্থ কর্মকার। বিচারপতি অনুরুদ্ধ বোস ও বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদীর এজলাসে সোমবার মামলার শুনানি হয়। আগামী শুক্রবার পরবর্তী শুনানি হবে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি চাইলে হেপাজতে নিয়েও পর্ষদ সভাপতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে সিবিআই? কারণ, কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশই দিয়েছিল, প্রয়োজনে হেপাজতে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল ও পর্ষদের ডেপুটি সেক্রেটারি পার্থ কর্মকারকে।
প্রসঙ্গত, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে দুর্গা পুজোর চতুর্থীর দিন ভিড় ঠেলে নিজাম প্যালেসে সিবিআই দপ্তরে হাজির হয়েছিলেন পর্ষদের বর্তমান সভাপতি গৌতম পাল। টানা ৫ ঘণ্টা তাঁকে জেরা করেছিলেন তদন্তকারীরা। জেরা করা হয়েছিল পর্ষদের সচিবকেও। এরপরই রক্ষাকবচ চেয়ে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পর্ষদের সভাপতি এবং সচিব। আবেদন খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সূত্রের খবর, সোমবার শীর্ষ আদালতে ছিল ওই মামলার শুনানি।
ওএমআর শিট সংক্রান্ত মামলায় গত ১৮ অক্টোবর সিবিআইকে আদালতে রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। আদালতে পেশ করা সিবিআইয়ের ওই রিপোর্টে পর্ষদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের তরফে আদালতে পেশ করা রিপোর্টে জানানো হয়, এস বসু রায় এণ্ড কোম্পানি এমনভাবে ওএমআর শিট তৈরি করেছিল যাতে প্রার্থীর নাম, রোল নম্বর কোনও কিছু স্পষ্ট বোঝা না যায়। এমনকী পর্ষদের কাছে ওএমআর শিট সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হলেও তাঁরা নতুন প্রিন্ট করা কপিকেই ডিজিটাইজ ডাটা হিসাবে চালানোর চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ।
এমনকী সিবিআইয়ের রিপোর্টে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরেও বর্তমান বোর্ড মেম্বাররা এস বসু রায় এণ্ড কোম্পানিকেই ওএমআর শিট তৈরির দায়িত্ব দিয়েছে। তাই তাঁদের জিজ্ঞসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান বিচারপতি। এরপরই দুর্গা পুজোর চতুর্থীর দিন সন্ধে ৬টার মধ্যে পর্ষদ সভাপতি, সচিবকে নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
বিচারপতি এও জানিয়েছিলেন, সিবিআই মনে করলে পর্ষদ সভাপতি, সচিবকে হেপাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। এরপরই রক্ষা কবচ চেয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পর্ষদ সভাপতি ও ডেপুটি সেক্রেটারি । হাইকোর্টের এহেন নির্দেশকে চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি গৌতম পালের আবেদন ছিল সিবিআই যাতে কোনও কড়া পদক্ষেপ করতে না পারে তার রক্ষাকবচ দিক সুপ্রিম আদালত। গৌতম পালের আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, সুপ্রিম কোর্টে যখন মামলা বিচারাধীন, তখন হাইকোর্টের বিচারপতির এহেন নির্দেশ কতটা যুক্তিযুক্ত? হাইকোর্টের এহেন নির্দেশকে সুপ্রিম কোর্টকে ‘ওভার রিচ’ করার প্রচেষ্টা হিসাবে ব্যাখ্যা করেন গৌতম পালের আইনজীবী। গৌতম পালের আইনজীবী এদিন শুনানি চলাকালীন আদালতে বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সালের সময়কালের নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে। সেখানে বর্তমান পর্ষদ সভাপতিকে ডাকার কারণ কী?
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, যদি তদন্তে সবরকম সহযোগিতা করা হয় তাহলে গ্রেপ্তারের আশঙ্কা কেন? যদি প্রয়োজন হয় আগামী শুক্রবার শুনানির পর ‘প্রোটেকশন’ দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − 7 =