হার মানলেন সুনক, ব্রিটেনে ক্ষমতার পরিবর্তন

৬৫০ আসনের ব্রিটিশ সংসদে সরকার গঠনের ম্যাজিক সংখ্যা ৩২৬। সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে বিরাট জয়ের দিকে লেবার পার্টি এগোতেই পরাজয় স্বীকার করে নিলেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকও। অর্থাৎ, ব্রিটেনে হতে চলেছে ক্ষমতার পরিবর্তন। বুথ ফেরত সমীক্ষাতেই এই ফলের আভাস মিলেছিল। এখন ফলাফল একেবারে স্পষ্ট। লেবার পার্টি ৩০০ আসনের গণ্ডি টপকানোর পরই ফলে ব্রিটেনে ১৪ বছরে কনজারভেটিভ পার্টির শাসনের অবসান ঘটল। রিচমন্ড এবং নর্দার্ন অ্যালার্টনে, তাঁর সমর্থকদের সামনে এক ভাষণে ঋষি সুনক বলেন, ‘এই সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করেছে লেবার পার্টি। আমি স্যার কিয়ার স্টারমারকে অভিনন্দন জানাতে ফোন করেছিলাম। আজ, সব পক্ষের শুভেচ্ছা নিয়ে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খল হাত বদল করা হবে। আমাদের দেশের স্থিতিশীলতা এবং ভবিষ্যতের প্রতি আমরা সকলেই আস্থা রাখি। আমি দুঃখিত। আমি এই হারের দায় নিচ্ছি।’
ঋষি সুনকের পরাজয় স্বীকার করে নেওয়ার পাশাপাশি, গণনা শেষ হওয়ার অনেক আগেই বিজয় ভাষণও দিয়ে দিয়েছেন লেবার পার্টির নেতা, স্যার কিয়ার স্টারমার। তিনি বলেন, ‘১৪ বছর পর ভবিষ্যত ফিরে পেল আমাদের দেশ।’ স্পষ্টতই তিনি তাঁর ভাষণে ১৪ বছরের কনজারভেটিভ পার্টির সরকারের শাসনের কথা উল্লেখ করেন। তিনিই ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। তবে, তাঁর সামনে রাস্তাটা একেবারেই কন্টকময়। তাঁর সামনে পাহাড় প্রমাণ চ্যালেঞ্জ রেখে যাচ্ছেন সুনক। অর্থনীতির হাল অত্যন্ত খারাপ। এই মূহূর্তে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সর্বোচ্চ করের বোঝা চেপেছে ব্রিটিশদের কাঁধে। ঋণের পরিমাণ প্রায় বার্ষিক উৎপাদনের সমান হয়ে গিয়েছে। ভেঙে পড়েছে জন-পরিষেবা ব্যবস্থাগুলি। ক্রমে কমছে আম ব্রিটিশদের জীবনযাত্রার মান। কনজারভেটিভ পার্টির পতনের এগুলো অন্যতম কারণ। তাই জয় পেলেও, স্টারমার বা তাঁর দলকে ঘিরে মানুষের মধ্যে তেমন উৎসাহ নেই। কিয়ার স্টারমারকে এই অবস্থা থেকে দেশকে তুলে ধরতে হবে।
ব্রিটেনের স্থানীয় সময় অনুযায়ী, ভোর ৫টা পর্যন্ত গণনায় কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি জয়ী হয়েছে ৩২৬ আসনে। আর কনজারভেটিভ পার্টি জিতেছে মাত্র ৬৯ আসনে। এছাড়া, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি জিতেছে ৩ আসনে। লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা জিতেছে ২১ আসনে। রিফর্ম ইউকে পার্টি জিতেছে ৩ আসনে। আর অন্যান্যরা জিতেছে ১ আসনে। ২০১৯-এ জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে লড়ে পরাজিত হয়েছিল লেবার পার্টি। এবার নির্দল হিসেবে লড়েছিলেন এই প্রাক্তন লেবার পার্টি নেতা। তিনিও জয়ী হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, জেরেমি করবিনের অধীনে, লেবার পার্টি অনেকটাই নয়া দিল্লি বিরোধী অবস্থান নিয়েছিল। ভারত ৩৭০ ধারা বাতিল করার পর, কাশ্মীরের উপর একটি জরুরি প্রস্তাব পাশ করেছিল লেবার পার্টি। বলা হয়েছিল ‘কাশ্মীরে বড় মাপের মানবিক সংকট চলছে।‘ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সেখানে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। পরে অবশ্য ব্রিটিশ ভারতীয় সম্প্রদায়ের দিক থেকে বড় প্রতিক্রিয়া আসায় কাশ্মীর সমস্যা, ভারত ও পাকিস্তানের ‘দ্বিপাক্ষিক বিষয়’ বলে সামাল দিয়েছিলেন করবিন। অনেকেই মনে করেন, ২০১৯-এ লেবার পার্টির হারের পিছনে কাশ্মীর নিয়ে অবস্থান বড় কারণ ছিল। তবে, কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বে লেবারদের অবস্থান অনেকটাই বদলে গিয়েছে। স্টারমার নিজেই ঘোষণা করেছেন, ভারত এবং ব্রিটিশ ভারতীয় সম্প্রদায়ের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চায় লেবার পার্টি। কাজেই, সুনকের বিদায়ে ভারত-ব্রিটেন সম্পর্কে খুব একটা প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন না আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 − 2 =