সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকুর জামিনের আবেদন খারিজ। আদালতের নির্দেশ, ২৮ জুন পর্যন্ত তাঁর জেল হেপাজত চলবে। একইসঙ্গে জানানো হয়েছে, সংশোধনাগারে তাঁকে জেরা করা যাবে। তাঁর বয়ান রেকর্ড করা যাবে। সেইসঙ্গে সিসিটিভিতে তাঁর গতিবিধি ওপর নজর রাখতেও নির্দেশ দেয় আদালত।
এদিকে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেপ্তার সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র বিষয়ে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য উঠে আসছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে। উঠে আসছে হাওয়ালা যোগের তত্ত্বও। হাওয়ালার মাধ্যমে ১১ কোটি টাকা ‘কাকুর’ সংস্থায় ঢুকেছে বলে দাবি ইডির। পাশাপাশি প্রমাণ লোপাটের জন্য ফোনের সব তথ্য লোপাটের যে নির্দেশ দিয়েছিলেন রাহুল বেরাকে তা সুজয়কৃষ্ণ-রই কিনা তা নিশ্চিত হতে ভয়েস স্যাম্পেল নেওয়ারও আবেদন জানানো হয় ইডি-র তরফ থেকে। এদিকে বুধবার আদালতে সুজয়কৃষ্ণের আইনজীবী সেলিম রহমান তাঁর মক্কেলের অন্তর্বর্তী জামিনের জন্য আবেদন করলেও সেই জামিনের বিরোধিতা করে ইডির আইনজীবী আদালতে জানান, অভিযুক্তর ব্যাপারে নানা তথ্য তদন্তকারী সংস্থার হাতে উঠে এসেছে। পাশাপাশি সুজয়কৃষ্ণের আইনজীবীর দাবি খণ্ডন করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী জানান, ‘ওঁরা বলছেন যে আমরা নাকি কিছুই পাইনি। কিন্তু রিকভারি মানে শুধু ক্যাশ উদ্ধার নয়।’
এরপরই ইডির হাতে সুজয়কৃষ্ণর ব্যাপারে যে সব তথ্য উঠে এসেছে, সেই বিষয়ে আদালতে বিস্তারিত জানান কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী। বলেন, ‘আমরা মানি ট্রেল খুঁজে পেয়েছি। ১০০ টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পাওয়া গিয়েছে। হাওয়ালার মাধ্যমে সংস্থায় টাকা ঢুকেছে, যার কন্ট্রোল ছিল অভিযুক্তর হাতে।’ ইডির আইনজীবীর দাবি, এমন চারটি সংস্থার নিয়ন্ত্রণ ছিল সুজয়কৃষ্ণর হাতে। তার মধ্যে ওয়েল্থ উইজার্ড নামে একটি সংস্থায় ১০ কোটি টাকা ঢুকেছে বলে আদালতে জানান ইডির আইনজীবী। এছাড়া আরও একটি সংস্থায় ১ কোটি টাকা ঢুকেছে বলে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তে উঠে এসেছে। পাশাপাশি ইডি-র আইনজীবী এও জানান, ৮০ কাঠা জমি কেনা হয়েছে এবং নির্মাণ সংস্থার কাজও করা হয়েছে। আর এই সবই দুর্নীতির টাকায় হয়েছে বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের। ইডির দাবি, যে ১০০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, সেগুলির মাধ্যমেই হাওয়ালার টাকা ঘোরানো হয়েছে।
এর পাশাপাশি, ইডি-র তরফ থেকে এও দাবি করা হয়, সুজয়কৃষ্ণর ফোন থেকেও বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে। ইডির দাবি, তাঁর সঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ার রাহুল বেরার কথাবার্তা রেকর্ড করা হয়েছে। সেখানে শোনা যাচ্ছে, সুজয়কৃষ্ণ রাহুলকে প্রমাণ লোপাটের জন্য তাঁর ফোনে থাকা নিয়োগ সংক্রান্ত নথি নষ্ট করে দেওয়ার জন্যও বলেন। সেই কারণে কাকুর ভয়েস স্যাম্পেল নেওয়ার আবেদন জানানো হয় ইডি-র তরফ থেকে। ফোন করে নিয়োগ সংক্রান্ত নথি নষ্ট করে দেওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, সেটি যাচাই করে দেখতে ভয়েস স্যাম্পেল পরীক্ষা করাতে চায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। পাশাপাশি ‘কাকু’কে জেলে গিয়েও জেরা করতে চান কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকেরা। সুজয়কৃষ্ণের সঙ্গে জেলে কে বা কারা দেখা করতে যাচ্ছে, তার উপরেও নজর রাখতে চায় ইডি। সেই কারণে জেলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে রাখারও আবেদন জানায়। ইডি-র এই সবকটি আবেদন মেনে নেন বিচারক।