কলকাতা : প্রতিবাদী চিকিৎসকদের ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ধ্বনির মধ্যেই শনিবার দুপুরে আচমকা সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে ধর্নায় বসেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারও।
মুখর প্রতিবাদীদের প্রবল হইচইয়ের মাঝে বেশ কয়েক মিনিট মাইক হাতেই দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বক্তব্য শুরু করতে পারেননি। ধর্নাস্থলে খানিক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়।
এর পর বলার চেষ্টা করেন। হইচই পুরোপুরি না থামলেও তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি। আমাকে বলতে দিন। এসেছি যখন আমরা আমাদের কাজ করবো। পাঁচ মিনিট বলবো।”
তিনি বলেন, ‘‘আমার নিরাপত্তাজনিত নানা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা সত্ত্বেও আমি নিজে ছুটে এসেছি। আপনাদের আন্দোলনকে কুর্নিশ জানাচ্ছি। আমি ছাত্র-আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছি। আমিও আন্দোলনের ব্যথা বুঝি”।
আবহাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি। আমাকে বলতে দিন। শুক্রবার সারা রাত ঝড়়জল হয়েছে। আপনারা কষ্ট পেয়েছেন। আপনারা যে ভাবে বসে আছেন, আমার কষ্ট হচ্ছে। গত ৩৪ দিন ধরে আমিও রাতের পর রাত ঘুমোইনি। কারণ, আপনারা রাস্তায় থাকলে আমাকেও পাহারাদার হিসাবে জেগে থাকতে হয়।’’
আন্দোলনকারীদের দাবিগুলি সরকার বিবেচনা করবে। এই আশ্বাস দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যদি আপনারা কাজে ফিরতে চান, আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আপনাদের দাবিগুলি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করব। আমি একা সরকার চালাই না। মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি সকলের সঙ্গে আমি আপনাদের দাবি নিয়ে আলোচনা করব।
তিনি বলেন, “সত্যি কেউ দোষী হলে অবশ্যই শাস্তি হবে। আমি চাই তিলোত্তমার বিচার হোক। সিবিআইকে অনুরোধ করবো, তিন মাসের মধ্যে যেন ফাঁসি হয়। কেউ দোষী থাকলে আমি নিশ্চয় ব্যবস্থা নেব। এটুকু বলতেই আমি এসেছি।’’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এত কষ্টের মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজছেন। আমার পোস্টটা বড় কথা নয়। আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আসিনি। আপনারা আমাদের ঘরের ভাইবোন। আন্দোলনের সমব্যথী হিসাবে এসেছি আমি। বড় দিদি হিসাবে এসেছি। আমাকে সময় দিন। ভাল থাকুন।’’
তিনি বলেন, “আমি আপনাদের কোনও অবিচার হতে দেব না। কেউ আমার বন্ধু বা শত্রু নয়। যাঁদের আমার বন্ধু বলছেন, আমি তাঁদের চিনিই না। প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁরা এসেছেন। সাধ্যমতো পদক্ষেপের চেষ্টা করব। আপনারা কাজে ফিরুন। আমি কোনও আপনাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করব না।’’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অনেক মানুষও মারা যাচ্ছেন। আপনারা কাজে যোগ দিন।
হাসপাতালের পরিকাঠামো ভালো করবো।
কোন রোগীকল্যাণ কমিটি কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আমি জানি না। আর জি করের রোগীকল্যাণ কমিটি ভেঙে দিলাম। সব মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতিতে জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্স, পুলিশ থাকবে। আশা করি বুঝতে পারছেন। ধরনামঞ্চে যখন আসতে পারলাম, বিশ্বাস রাখতে পারেন। আপনাদের কাছে আসা মানে ছোট হওয়া নয়। আবার অনুরোধ করবো, কাজে ফিরুন।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা চলছে। কোনও পদক্ষেপ আপনাদের বিরুদ্ধে করা হবে না।” ধর্নামঞ্চে আন্দোলনকারীদের যা খাবার দেওয়া হচ্ছে, নির্বিচারে তা না খাওয়ার অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের কাছে আসা মানে নিজেকে ছোট করা নয়। বড় করা। এটা আমার শেষ চেষ্টা।’’