কলকাতা: অস্ত্রোপচারের পর জ্ঞান ফিরতেই পা দেখে চোখ কপালে উঠেছিল মুর্শিদাবাদের এক কিশোরের। মুখ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল, এ যে ভূতের পা! হবে নাই বা কেন? গল্পেই শোনা যায় ভূতের পা থাকে উল্টোদিকে।
পা কেটে উল্টোদিক করে জুড়ে ক্যানসার আক্রান্ত কিশোরকে নব জীবন দিলেন এসএসকেএম হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসকরা। ক্যানসার আক্রান্ত কিশোরের পা কেটে ফের তা জুড়ে দিলেন সার্জেনরা। তবে গোড়ালিটা সামনে চলে এল! চিকিৎসা পরিভাষায় এমন অস্ত্রোপচারকে বলে রোটেশনপ্লাস্টি।
মুর্শিদাবাদ থেকে ছেলে রজতকে নিয়ে অবনী রায় কলকাতার এসএসকেএম-এ এসেছিলেন। ছেলের বাঁ পা দেখাতেই প্রথমেই এক্স-রে করতে বললেন। এক্স-রে করিয়ে আনতেই রাশভারী ডাক্তারবাবু বলেন, ‘ব্যাপার জটিল। অপারেশন করতে হবে।’ ছেলে ভরতি হল। দুটো কেমোথেরাপি হল। তারপর টানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় অস্ত্রোপচার করা হল। কিন্তু অপারেশনের পর বাঁ পায়ের গোড়ালি চলে এল সামনে। পাও অনেক ছোট!
প্রসঙ্গত হাসপাতালের চিকিৎসকদের দাবি, রাজ্যের কোনও সরকারি হাসপাতালে এমন রোটেশনপ্লাস্টি এই প্রথম। একই পদ্ধতিতে দরকারে ছোট পা বড় করাও সম্ভব বলছেন বিভাগীয় চিকিৎসকরা। তবে পূর্ণবয়স্কর ক্ষেত্রে এমনটা সম্ভব নয়। মোদ্দা কথা, হাত-পায়ের অস্থিসন্ধিতে কোনও টিউমার থেকে ক্যানসার হলে এমন অস্ত্রোপচার করে রোগীর প্রাণ বাঁচানো হয়।
এসএসকেএম হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মুকুল ভট্টাচার্য এবং সহযোগী ডা. কৌশিক নন্দী সেই অপারেশন করেছেন। ঘটনা হল বিশ্বে এমন অস্ত্রোপচার চালু হয় ২০১৮ সালে। কয়েক বছরের মধ্যেই এশিয়া তথা ভারতের মতো দেশগুলিতে এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার শুরু হলেও তা নির্দিষ্ট কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালেই সীমাবদ্ধ ছিল। মুকুলবাবুর কথায়, ‘রাজ্যের কোনও সরকারি হাসপাতালে এমন অস্ত্রোপচার এই প্রথম।’
চিকিৎসকদের সমাজমাধ্যমে এই খবর রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে। ফলে রাজ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে হাঁটু বা হাতের কনুইয়ের টিউমার, ক্যানসার রোগীদের অস্ত্রোপচারের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। বুধবার ও শুক্রবার এমন দু’টি অস্ত্রোপচার হবে এসএসকেএমে। মূলত, ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কিশোর-কিশোরীর হাঁটু বা কনুইয়ে কোনও টিউমার হলে পরীক্ষা করে দেখা হয় ক্যানসার হয়েছে কি না। ক্যানসার হলে কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ বাদ দেওয়া হয়। প্রায় একইসঙ্গে হাঁটু জুড়ে দেওয়া হয় কোমরের সঙ্গে। এর ফলে একটি পা ছোট হয়ে যায়। হাঁটাচলায় সমস্যা হয়। সেই সমস্যা মেটাতে ‘ওয়াকার’ ব্যবহার করতে হয় রোগীকে।
কালীপুজোর আগেই বাড়ি ফিরে গিয়েছে মুর্শিদাবাদের কিশোর। হোক না পা উল্টো। তাতে কী! আগে তো জীবন।