বন্দুকবাজের হাত থেকে পণমুক্ত মালদা মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীরা

বড় অঘটন থেকে বাঁচল মালদা মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। মালদহ স্কুলের বন্দুকবাজের উপর জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েন জেলা পুলিশের ডিএসপি (ডিএনটি) আজহারউদ্দিন খান। এরপর তাকে জাপটে ধরে ফেলে অন্যরা। তারপর পণমুক্ত ছাত্রছাত্রীদের উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, বুধবার দুপুরে মালদা মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাইস্কুলে ঢুকে পড়ে এক বন্দুকবাজ। তার ডান হাতে ছিল পিস্তল আর কাঁধে ব্যাগ। সূত্রে খবর, ক্লাস সেভেনের ঘরে ঢুকে পড়ে ওই ব্যক্তি। ব্যাগ থেকে দুটি মুখবন্ধ বোতল নামিয়ে রাখে টেবিলের উপর। সন্দেহ করা হয় ওই দুই বোতলে হয় অ্যাসিড রয়েছে কিংবা পেট্রল। পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখে। পরে এদিকে ওই ব্যক্তির হাতে পিস্তল দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে খুদে পড়ুয়ারাও। একইসঙ্গে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন শিক্ষকরাও। এদিকে ওই ব্যক্তি পিস্তল উঁচিয়ে দাবি করতে থাকে, ‘আমাকে বলেছে আমার স্ত্রীর চরিত্র খারাপ, আমার স্ত্রীকে বলেছে তোমার স্বামীর চরিত্র খারাপ।’ একইসঙ্গে তিনি এও দাবি করেন, তাঁর স্ত্রী এবং সন্তান নিখোঁজ। এ নিয়ে পুলিশ কর্তাদের কাছে অভিযোগ জানালেও তাঁরা কোনও ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এই ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনার খবর পেয়ে স্কুলে ছুটে আসেন অভিভাবকরা। বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে স্কুলে পৌঁছন পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব। এরপরই জেলা পুলিশের ডিএসপি (ডিএনটি) আজহারউদ্দিন খান তার ওপর আচমকাই ঝাঁপিয়ে পড়েন। ধাক্কা সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে যায় ওই বন্দুকবাজ। সঙ্গে পড়ে যান ওই পুলিশ আধিকারিকও। ততক্ষণে পুলিশ এবং স্কুলের অন্যান্যরা এসে জাপটে ধরে ফেলেন ওই বন্দুকবাজকে। পুলিশ আধিকারিকের তৎপরতায় ওই অবস্থা থেকে রেহাই পান পড়ুয়া, শিক্ষিকা এবং স্কুলের বাইরে অপেক্ষমাণ উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা।
এদিকে মালদা পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ব্যক্তির নাম দেব বল্লভ। তার কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গিয়েছে। তাঁর জামাকাপড় হাতড়ে দেখা যায় পায়ে বাঁধা একটি ছুরি। পাশাপাশি মালদা পুলিশের তরফ থেকে এও জানানো হয় যে, বছর দুয়েক আগে দেবের একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয় সমাজমাধ্যমে। যা দেখে সেই সময় চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় জেলার পুলিশকর্তাদের। ২০২২ সালে ভাইরাল হওয়া মিনিট দেড়েকের ওই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছিল, আগ্নেয়াস্ত্র এবং কয়েক ধরনের বোমা হাতে নিয়ে হুমকি দিচ্ছেন দেব। যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি ‘একদিন’। ভিডিয়োয় তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘এই অস্ত্র পিস্তল, এই পেট্রল বোমা, এই যে বোমা, অ্যাসিড। এই সব রকম রেখেছি সন্ত্রাসবাদীদের জন্য। সন্ত্রাসবাদীরা আমাকে আক্রমণ করলেই আমি ওদের ঝাঁঝরা করে দেব। আমার কাছে যে বোমা আছে তা ব্যাগের পকেটে রাখব। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে সবাইকে ধ্বংস করে দেব। যাকে পাব তাকেই আমি খুন করতে প্রস্তুত।’ এদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনাতেও দেবকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
এদিকে মালদা পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে গিয়ে জেরা করা হবে। সে পিস্তল কোথা থেকে পেল, কী ছিল তার প্রকৃত উদ্দেশ্য, এই ঘটনার পিছনে আরও কেউ আছে কিনা সবই তদন্ত করে দেখা হবে।
এদিকে এই ঘটনার পর এরপরই ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সঙ্গে ক্লাস রুম থেকে বের করে দেওয়া হয়। বাকি স্কুলও এদিন ছুটি ঘোষণা করে দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − six =