জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশকে ফুৎকারে উড়িয়ে জানাল রাজ্য। জাতীয় শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক বা দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও রাজ্য সরকার সেই পথে হাঁটছে না তা জানিয়ে দিলেন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। এতদিন যেভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষা চলে আসছিল, রাজ্যের শিক্ষানীতিতে সেভাবেই মাধ্যমিক পরীক্ষা ব্যবস্থা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। রাজ্য শিক্ষানীতিতে এই মাধ্যমিক পরীক্ষা রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত যথার্থ বলেই মনে করছেন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য।
তাঁর ব্যাখ্যা, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হল স্কুলজীবনের শেষ পরীক্ষা। এরপর উচ্চশিক্ষার দিকে অগ্রসর হয় পড়ুয়ারা। আর এক্ষেত্রে উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পেশাগত ক্ষেত্রেও উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট কাজে লাগে। ফলে যদি মাধ্যমিক পরীক্ষা না থাকে, তাহলে পড়ুয়াদের স্কুল জীবনের একমাত্র বড় পরীক্ষা হবে উচ্চমাধ্যমিক। সেক্ষেত্রে স্কুল জীবনের শেষ বড় পরীক্ষা দেওয়ার আগে পড়ুয়াদের নিজেদের মূল্যায়ন করার কোনও সুযোগ থাকবে না।
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের মতে, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আগে পড়ুয়াদের নিজেদের প্রস্তুতি হিসেবে মাধ্যমিক পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই মাধ্যমিক পরীক্ষা ব্যবস্থা অবশ্যই থাকা দরকার বলে মনে করছেন তিনি। এতে একদিকে যেমন পড়ুয়ারা নিজেদের মূল্যায়ন করার সুযোগ পায়, অন্যদিকে স্কুলগুলিও নিজেদের পঠন-পাঠন প্রক্রিয়া নিয়ে একটি মূল্যায়ন করতে পারে। তাই সরাসরি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার বদলে, মাধ্যমিক পরীক্ষার মাধ্যমে একটি মূল্যায়নের পর পড়ুয়াদের স্কুলজীবনের শেষ বড় পরীক্ষায় বসাই শ্রেয় বলে মনে করছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের শিক্ষানীতিতে ইতিমধ্যেই উচ্চমাধ্যমিক স্তরে অর্থাৎ একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে সেমেস্টার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আগামী তিন বছরে ধাপে ধাপে এই সেমেস্টার ব্যবস্থা অষ্টম শ্রেণি থেকে শুরু করার জন্যও সুপারিশ করেছে কমিটি।
এর পাশাপাশি শনিবার গ্যাজেট নোটিফিকেশন করে এদিন থেকেই রাজ্য শিক্ষানীতি বলবৎ শুরু করে দিল শিক্ষা দফতর। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু আগেই জানিয়েছিলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে ‘বেস্ট প্র্যাকটিসেস’ বেছে নিয়ে তৈরি হয়েছে এই রাজ্য শিক্ষানীতি।
গেজেট নোটিফিকেশনে রাজ্যের শিক্ষানীতিতে জোর দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু ক্ষেত্রে। তার মধ্যে এক বছরের প্রি-প্রাইমারি ক্লাস এবং চার বছরের প্রাথমিকের ক্লাসের কথা বলা হয়েছে। এরপর পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি এবং নবম-দশম শ্রেণি শেষে মাধ্যমিক পরীক্ষা। তারপর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শেষে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হবে সেমেস্টার পদ্ধতি এবং এমসিকিউ ধাঁচে। প্রত্যেক পড়ুয়ার তিন বছর বয়স থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অ্যাকাডেমিক রেকর্ড জমা থাকবে ক্লাউডে।
এর পাশাপাশি একেবারে শুরুর পড়াশোনার জন্য মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একাধিক দফতর মিলিয়ে তৈরি হবে একটি সমন্বয় কমিটি। এর পাশাপাশি প্রত্যেক স্কুলে এবার থেকে ‘গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি’-ও আয়োজন করা হবে। পড়ুয়া ও শিক্ষকের অনুপাতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার দিকেও নজর দেওয়া হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষকদের গ্রামে বদলি করা হবে। পড়ুয়াদের জন্য নিয়মিত কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থার কথাও বলা হয়েছে রাজ্যের শিক্ষানীতিতে।
উচ্চমাধ্যমিক শেষে স্কুলের গণ্ডি পেরনোর পরই শুরু কলেজ জীবন। সেক্ষেত্রে পড়ুয়াদের সুবিধার্ধে স্কুলগুলির সঙ্গে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সমন্বয় তৈরির কথাও বলা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনীদের কাছ থেকে অনুদানের নীতি নির্ধারণ করার দিকেও জোর দেওয়া হয়েছে রাজ্যের শিক্ষানীতিতে।
একইসঙ্গে এও বলা হয়েছে যে একই ক্যাম্পাসে যাতে নার্সিং ও প্যারামেডিক্যাল কোর্স করানো যায় এবং এর পাশাপাশি আইনের পাঠের জন্য বিশেষ কোর্স চালু করার কথাও। এছাড়া ভিন রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাতে রাজ্যে আসে, সেদিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি নীতি নির্ধারণের কথাও বলা হয়েছে রাজ্যের শিক্ষানীতিতে। গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মাতৃভাষা ও আঞ্চলিক ভাষাকে। প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব মাধ্যমের পড়ুয়াদের জন্য বাংলা বিষয় পড়ার সুযোগের কথাও বলা হয়েছে।