স্কুলের বৈধতা নেই, ফলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা অকূল পাথারে। আদৌও পড়ুয়ারা বোর্ডের পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। আর স্কুলের এই গাফিলতির জেরে তিন হাজার পড়ুয়ার ভবিষ্যত প্রশ্নের মুখে। রিপন স্ট্রিটে ইংরেজি মাধ্যম সেন্ট অগাস্টিন স্কুলের বিরুদ্ধে উঠেছে এমনই চরম গাফিলতির অভিযোগ। তার খেসারত মেটাতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। এই অবস্থায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই বেসরকারি স্কুল পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা। সূত্রে খবর, আচমকাই পড়ুয়ারা জানতে পেরেছেন অনুমোদনই নেই তাঁদের স্কুলের। বোর্ডের পরীক্ষার আগে প্রায় ৫০০ পড়ুয়ার রেজিস্ট্রেশনও আটকে গিয়েছে। খাস কলকাতার বেসরকারি স্কুলের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ সামনে আসার পর তৎপর হয় কলকাতা হাইকোর্ট। এরপরই সামনে আসে আরও এক তথ্য। জানা যায়, সেই স্কুলটি যে বাড়িতে চলছে, তার কোনও কমপ্লিশন সার্টিফিকেট নেই। এই ঘটনায় অবিলম্বে খোঁজ খবর নেওয়ার পাশাপাশি স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত। বেসরকারি স্কুল মানেই যে সরকার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না, এমন বার্তাও দিতে শোনা যায় বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুকে।
প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগেই কলকাতার রিপণ স্ট্রিটের ওই স্কুলে এই অভিযোগ তুলে রীতিমতো বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকেরা। বুধবার আদালতে স্কুল বৈধতা না থাকার কথা স্বীকার করা নিয়েছে। স্কুলের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু বলেন, ‘পড়ুয়াদের হাতে তো প্ল্যাকার্ড ধরিয়েছেন আপনারাই। ওদের হাত থেকে পেন ছাড়িয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে ধরনা দিতে শিখিয়েছেন। আপনাদের দায়িত্বহীনতা ওদের এটা করতে বাধ্য করেছে।’ সামগ্রিক ঘটনায় স্কুলের পরিচালন কমিটির ভূমিকা নিয়ে রীতিমতো অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি।
এদিকে এদিন মামলাকারীর আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় শুনানিতে উল্লেখ করেন, স্কুল বৈধতা না থাকার কথা এখন জানা যাচ্ছে। আর তার জেরে অধিকাংশ অভিভাবকের রাতের ঘুম উড়েছে। সেই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, এই স্কুলের ক্ষেত্রে রাজ্য কোনও টাকা নেয় না, ফলে রাজ্যের কোনও দায়িত্ব নেই। এ কথা শুনে বিচারপতি বসু বলেন, ‘টাকা না নিলেই কি দায়িত্ব এড়াতে পারে রাজ্য?’ প্রত্য়ুৎত্তরে
স্কুলের আইনজীবী জানান, বোর্ড অনুমোদন দিচ্ছে না স্কুলকে। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এত কিছুর পরও কীভাবে স্কুলে নতুন পড়ুয়া ভর্তি করা হচ্ছে, তা নিয়ে বিচারপতি জানতে চান, নতুন ছাত্রছাত্রী কীভাবে ভর্তি করা হচ্ছে? তারা তো জানেই না যে ওই স্কুলের অনুমোদন নেই।
এদিকে, বিচারপতির প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে স্কুলের আইনজীবী জানান, স্কুলবাড়ির কোনও কমপ্লিশন সার্টিফিকেট নেই। ওই সার্টিফিকেট থাকলে তবেই পুরসভা অনুমোদন দেয়। বাড়িটির বেশিরভাগ অংশ ভেঙে পড়ছে বলেও জানিয়েছে স্কুল। এ কথা শুনে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারপতি স্কুল কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জানতে চান, ‘এর দায় কার? সিসি অর্থাৎ কমপ্লিশন সার্টিফিকেট নেই এমন বাড়িতে স্কুল চলছে কীভাবে? এটা একটা ক্রিমিনাল অফেন্স। এরই রেশ টেনে তিনি এও বলেন, এই ঘটনায় এফআইআর করা প্রয়োজন।’ এরপরই এই স্কুলের বোর্ডের প্রত্যেক সদস্যকে আদালতে আসতে বলেন বিচারপতি। কেন্দ্রের আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্যকে স্পেশাল অফিসার হিসেবে নিযুক্তও করেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। তিনি ওই স্কুলে গিয়ে সমস্যার কথা শুনবেন ও সোমবার আদালতে জানাবেন সেই তথ্য। তারপরই সিদ্ধান্ত নেবে আদালত। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।