হাসপাতাল না ফূর্তি মারার জায়গা, প্রশ্ন মদন মিত্রের

‘সে নো টু পিজি’, আমি মদন মিত্র বলছি। মধ্যরাতে এসএসকেএম দাঁড়িয়ে এমনটাই বলতে শোনা গেল কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রকে। রোগী ভর্তি করাতে গিয়ে রাজ্যের অন্যতম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে ফিরতে হয় প্রাক্তন মন্ত্রীকে। অথচ, একসময় এই এসএসকেএমে মদন মিত্রের প্রভাব বা আধিপত্যের কথা ছিল সর্বজনবিদিত। রোগী ভর্তি করার জন্য বহু মানুষই শরণাপন্ন হতেন মদন মিত্রের। সেই এসএসকেএমেই বিধায়ক যাওয়া সত্ত্বেও রোগীকে ফেরানো হল বিনা চিকিৎসায়। এরপরই শুক্রবার মধ্যরাতে এসএসকেমে দাঁড়িয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরাসরি ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপও দাবি করেন।
ঘটনার সূত্রপাত পেশায় হাসপাতালে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট শুভদীপ পালকে কেন্দ্র করে। গত ১৮ মে রাতে বাইপাসে বাইক দুর্ঘটনায় আহত হন তিনি। প্রথমে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা হয় পরে বেসরকারি হাসপাতাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসা ব্যায়বহুল। তাই পরিবারের লোক মদন মিত্রের দ্বারস্থ হন। এরপরই মদন মিত্র শুভদীপের পরিবারের সদস্যদের আশ্বস্ত করে বলেন, রোগীকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যেতে। কিন্তু সেখানে ৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও রোগীর ভর্তি তো দূরের কথা প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুও হয়নি বলে অভিযোগ। এর পর রাত ১টা নাগাদ হাসপাতালে যান মদন মিত্র। সোজা ঢুকে যান ট্রমা কেয়ারের ভিতরে। তারপর বেরিয়ে এসেই কার্যত বিস্ফোরক অভিযোগ আনেন এসএসকেএমের বিরুদ্ধে।
মদন মিত্র জানান, অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য্যের মতো মন্ত্রীরা মাঝরাতে ফোন তুললেও, হাসপাতালের কোনও আধিকারিক রাতে ফোন তোলেননি। এমন কি, হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে অরূপ বিশ্বাস অথবাা স্বাস্থ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমাা ভট্টাচার্য ফোন করেও হাসপাতালের কর্তাদের ফোনে পাননি বলে দাবি করেন মদন মিত্র। হাসপাতালে উপস্থিত একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার পদমর্যাদার এক আধিকারিক, অরূপ বিশ্বাসকে ফোনে ভুল তথ্যও দেন বলে অভিযোগ মদন মিত্রের। রাতে তাঁর সঙ্গে এই রোগী ভর্তি নিয়ে কথা হয়েছে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের। মদনের দাবি, অরূপ বিশ্বাস তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেছেন হাসপাতালের অ্যাস্টিস্ট্যান্ট সুপার রোগীকে দেখেছেন। কিন্তু রোগীর পরিজনদের দাবি, কেউ দেখেননি রোগীকে। মন্ত্রীকে এভাবে মিথ্যা কথা কেন বলা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মদন। এরপরই সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি মদন মিত্র বলছি। দরকার হলে আমার হাতের ঘড়ি, আংটি বিক্রি করে আমি ওই রোগীর চিকিৎসা করাব।’ তিনি একজন বিধায়ক, তাঁকে এভাবে ফিরতে হলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মদন মিত্র। একইসঙ্গে টাকা নিয়ে ভর্তি থেকে ভিআইপি-দের সুবিধা দেওয়ার মতো অভিযোগ তোলেন কামারহাটির বিধায়ক। কারণ,এদিন পিজিতে দাঁড়িয়ে দেখতে পান হাসপাতালের কর্মীরা কিছু মানুষকে ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছেন। তখনই মদন জিজ্ঞেস করেন, ‘ওদের ঢুকতে দিচ্ছিস কেন? ক্যাশ দিয়েছে? কত মাল দিয়েছে তোদের?’ টাকা দিলেই তবেই নাকি ট্রমা কেয়ারে জায়গা পাওয়া যায়, মধ্যরাতে এমনই অভিযোগ তুললেন তিনি। ১০ বা ৫০ হাজারে ট্রমা কেয়ারের বেড বিক্রি হচ্ছে বলেও দাবি করেন বিধায়ক।
এখানেই শেষ নয়। এসএসকেএম-কে ‘ফূর্তি করার অডিটোরিয়াম’ বলেও তোপ দাগেন মদন মিত্র। একসময় রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন মদন। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সারদা-কাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়ার পর অসুস্থ হয়ে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন এই হাসপাতালে। সেই মদন মিত্র এদিন বলেন, ‘আগে পিজির নিয়ম ছিল, বেড না দিতে পারলে ডাক্তার এমার্জেন্সি থেকে বেরিয়ে গিয়ে রোগী দেখবে। তা না করে ভিতরে বসে চা খাচ্ছে, সিগারেট খাচ্ছে, আর কী খাচ্ছে জানি না। বসে বসে মজা নিচ্ছে। হাসপাতাল না ফূর্তি মারার অডিটোরিয়াম।’
রাত ৯ টার পর কেন হাসপাতালের সুপার বা ডিরেক্টর ফোন ধরেন না, তা নিয়েও এদিন প্রশ্ন তোলেন তিনি। পাশাপাশি মদনের দাবি, তিনি বিধায়ক বলে তাঁকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে, অথচ রোগীর পরিবার ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে, ছুটে এসে আটকেছে পুলিশ। পুলিশকেও কড়া ভাষায় তোপ দাগতে শোনা গিয়েছেন মদনকে। তিনি বলেন, ‘বড় বড় লোক এলে তাদের প্রোটেকশন, চা জল-খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য রাখা হয়েছে পুলিশকর্মীদের।’ এসএসকেএম ‘জনগণের হাসপাতাল নেই’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও দাবি করেন মদন। এদিকে কার্যত বাধ্য হয়েই নিজের খরচে মল্লিকবাজারের বেসরকারি হাসপাতালে ফের রোগীকে ভর্তি করতে পাঠান মদন মিত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × two =