মরণ-বাঁচন ম্যাচ জিতে সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কা, এশিয়া কাপ থেকে বিদায় বাংলাদেশের

বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে এশিয়া কাপের ম্যাচটা ছিল সব অর্থেই ‘ডু অর ডাই’। আফগানিস্তানের কাছে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। ফলে বৃহস্পতিবার এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার লড়াই ছিল টিকে থাকার। সেই ম্যাচে বাংলাদেশকে ২ উইকেটে হারিয়ে টুর্নামেন্টে টিকে থাকল শ্রীলঙ্কা। এশিয়া কাপের সুপার ফোরে পৌঁছে গেলেন শানাকারা। অন্য দিকে দুটো ম্যাচ হেরে বাংলাদেশ ছিটকে গেল টুর্নামেন্ট থেকে।

এই ম্যাচের বল গড়ানোর আগে থেকেই উত্তাপ ছড়িয়েছিল। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক শনাকা বলেছিলেন, ”মুস্তাফিজুর রহমান ভাল বোলার। শাকিব আল হাসানও বিশ্বমানের ক্রিকেটার। এই দু’ জন ছাড়া বাংলাদেশে ভাল কোনও বোলার নেই। বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ হিসেবে সহজ।” শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে নামার আগে খালেদ মাহমুদ বলেন, ”শ্রীলঙ্কা দলে বিশ্বমানের কোনও বোলারই আমি দেখতে পাচ্ছি না।”

ফলে ম্যাচ শুরুর আগেই পারদ চড়েছিল এই ম্যাচের। টস জিতে শ্রীলঙ্কা এদিন প্রথমে ব্যাট করতে পাঠায় বাংলাদেশকে। দলের রান যখন ১৯, তখন আউট হন সাব্বির রহমান (৫)। মেহেদি হাসান ও শাকিব ইনিংস গোছানোর কাজ করেন। মেহেদি আক্রমণের রাস্তা নেন। তিনি এবং শাকিব স্কুপ মেরে শ্রীলঙ্কার বোলিং তছনছ করতে শুরু করেন। হাসারাঙ্গার বলে বোল্ড হন মেহেদি (৩৮)। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম (৪) বেশিক্ষণ টেকেননি ক্রিজে। শাকিব ফেরেন ব্যক্তিগত ২৪ রানে। এর পরে আফিফ হোসেন ও মাহমুদুল্লাহ পার্টনারশিপ গড়েন। আফিফ হোসেন ২২ বলে ৩৯ রান করেন। অন্যদিকে মাহমুদুল্লাহ ২২ বলে ব্যক্তিগত ২৭ রান করেন। শেষের দিকে মোসাদ্দেক হোসেন ৯ বলে ২৪ রান করে অপরাজিত থেকে যান। তাসকিন আহমেদও ৬ বলে মারমুখী ১১ রান করেন। ফলে ২০ ওভারে বাংলাদেশ করে ৭ উইকেটে ১৮৩ রান।

রান তাড়া করতে নেমে শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার নিসাঙ্কা ও মেন্ডিস শুরুটা মন্দ করেননি। দলের রান যখন ৪৫ তখন এবাদত হোসেনের বলে ফেরেন নিসাঙ্কা (২০)। এরপরে আর তিন রান যোগ হতেই দ্বিতীয় উইকেট পড়ে শ্রীলঙ্কার। চরিত আসালাঙ্কাকে (১) আউট করেন এবাদত হোসেন। শ্রীলঙ্কার রান তখন ২ উইকেটে ৪৮। দানুষ্কা গুণতিলকও (১১) বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। গুণতিলকাও এবাদত হোসেনের শিকার। তাসকিন আহমেদের বলে স্কুপ মারতে গিয়ে আউট হন ভানুকা রাজাপক্ষে (২)। চার উইকেটে ৭৭ হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। এবাদত হোসেন লড়াই নিয়ে যান শ্রীলঙ্কার ক্যাম্পে। এই চাপের মুখে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন কুশল মেন্ডিস। তিনি যখন শ্রীলঙ্কাকে ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করছেন ঠিক সেই সময়ে মুস্তাফিজুর রহমান আঘাত হানেন। কুশল মেন্ডিস ৩৭ বলে ৬০ রান করে ডাগ আউটে ফেরেন। হাসারাঙ্গাকে (২) ফিরিয়ে ধাক্কা দেন তাসকিন।

শেষ তিন ওভারে জেতার জন্য শ্রীলঙ্কার দরকার ছিল ৩৪ রান। ক্রিজে তখনও ছিলেন দাসুন শানাকা। মোক্ষম সময়ে মেহেদি হাসানকে গ্যালারিতে ফেলতে গিয়ে আউট হন শানাকা (৪৫)। চাপে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা। শেষের দিকে টেনশন বাড়তে থাকে। শাকিব আল হাসান রান আউট করেন করুণারত্নেকে (১৬)। শেষ ওভারে জেতার জন্য দ্বীপরাষ্ট্রের দরকার ছিল ৮ রান। সেই রান খুব সহজেই তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা। চার বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে যায় শ্রীলঙ্ক। বলা ভাল ভাল মানের বোলারের অভাবেই বাংলাদেশকে ছিটকে যেতে হল। ম্যাচের আগে শানাকা বলেছিলেন দু’ জন ছাড়া বোলার নেই বাংলাদেশ দলে। শানাকার কথা প্রায় মিলে গেল। এবাদত হোসেন তিন-তিনটি উইকেট নিলেও রান দিয়ে ফেলেন। মুস্তাফিজুরের মতো অভিজ্ঞ বোলারও ডেথ ওভারে ঠিকমতো বল করতে পারলেন না। শাকিব শেষ ওভারে স্পিনার মেহদিকে দেন বল করতে। অনেক আগেই তাসকিন, নিজের কোটা শেষ করে ফেলেছিলেন শাকিব। ফলে শেষ ওভারে স্পিনারকে আক্রমণে আনা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও উপায় ছিল না শাকিবের। কিন্তু মেহদি আটকে রাখতে পারেননি শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − four =