নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায় প্রতিদিনই বিদ্ধ হতে দেখা যাচ্ছে শাসকদলকে। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা তদন্তে নামতেই প্রতিদিনই সামনে আসছে নতুন নতুন তথ্য। যা নিঃসন্দেহে বেজায় অস্বস্তির। সেখানে এই নিয়োগ দুর্নীতিরে ক্ষেত্রে বিরোধী শিবিরকে প্রত্যাঘাত করতে এবার বাম আমলে নিয়োগ দুর্নীতির খতিয়ান তুলে ধরতে চাইছে ঘাসফুল শিবির। ইতিমধ্য়েই বামেদের দুর্নীতির ময়নাতদন্ত হবে বলে হুঁশিয়ারির বার্তা দিতে দেখা গেছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এরই পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও জানিয়েছেন, দুর্নীতির শ্বেতপত্র শীঘ্রই সামনে আসবে। আর এই বার্তা শাসক দলের তরফ থেকে আসার পর থেকেই বঙ্গ রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন জল্পনা।
এদিকে এরই মাঝে বাম আমলে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনটাই দাবি করে বসলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের-ই এক অধ্যাপক মনোজিৎ মণ্ডল। আর তা জানিয়েছেন ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে। যা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়ে গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেও। ফেসবুক পোস্টে মনোজিৎ মণ্ডল লেখেন, ‘আমার কাছে অনেক নাম রেডি আছে। যাদবপুরের নামও আছে, আগের পরেরও। মামলা তো চলছে, কিন্তু সেসব নিয়ে চর্চা হয় না, কারণ এগুলো সিপিএম করেছে যে। আচ্ছা চলুন একটা নাম বলেই ফেলি। ভদ্রলোক টিভিতে তেড়ে ভাষণ দেন। বহু আগে সরকারি কলেজে চাকরি পেয়েছেন। তখন স্নাতকে ৫০ শতাংশ নম্বর না পেলে চাকরি হতো না। উনি রিভিউ করেও ৪৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। কিন্তু, সেই আমলে চাকরি হয়েছিল।’ একইসঙ্গে ওই অধ্যাপক এও দাবি করেন, এ ব্যাপারে তাঁর কাছে আরটিআই করা তথ্য় রয়েছে। যদিও পোস্টের শেষে আক্ষেপও করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। আক্ষেপের সুরেই লিখেছেন, ‘কী হবে এসব বলে?’ যদিও এই মতামত তাঁর একান্তই ব্যক্তিগত বলেও জানান তিনি।
তবে এ বিষয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিতে দেখা যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটার সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়কে। রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা যোগ্যাতার ভিত্তিতেই নিয়োগ পেয়েছেন। যোগ্যতা রয়েছে বলেই তাঁরা কাজ করছেন। উনি যা মন্তব্য করছেন তা নিয়ে উনি চাইলে কোর্টে যেতে পারেন। দলমত নির্বিশেষে কোনও অধ্যাপকের যোগ্যতা নিয়ে ওনার প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই আদালতে যেতে পারেন। ওনাকে আমাদের চ্যালেঞ্জ রইল। কোর্টে গেলে সেখানেই দেখা হবে।’
মনোজিৎবাবুর এই পোস্ট সামনে আসার আগে ২০২২ সালের জুনের মাঝামাঝি সিপিএমের লোকাল কমিটির প্যাডের কাগজে লেখা একটি চাকরির ‘সুপারিশপত্র’ নিয়ে শোরগোল পড়ে। ভাইরাল হওয়া সেই সুপারিশ পত্র নাকি খুঁটিয়ে পড়লে দেখা যাচ্ছে চিঠিটি ২০০৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর কমরেড খগেন্দ্রনাথ মাহাতোর উদ্দেশে লেখা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে ধেড়ুয়া অঞ্চল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ সংক্রান্ত একটি সুপারিশ করা হয়েছিল ওই চিঠিতে। তবে একদিন-এর তরফ থেকে এই ভাইরাল হওয়া ছবিটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ওই সুপারিশপত্র পোস্ট করে বর্তমানে ফের তদন্তের দাবি করতে দেখা যায় তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষকে। সম্প্রতি কুণাল ঘোষ এও জানান, সিপিএম জমানায় এমন কোনও হোলটাইমার ছিলেন না, যাঁর বাড়িতে কেউ সরকারি চাকরি করতেন না। একই সুর শোনা গিয়েছে ব্রাত্যর গলাতেও। এমনই এক প্রেক্ষিতে সামনে এসে পড় মনোজিৎ মণ্ডলের পোস্ট। যা নিয়ে ফের আন্দোলিত হচ্ছে বঙ্গ রাজনীতি।