ইডেনে তছনছ সৌরভের দিল্লি, প্লে-অফের আরও কাছে কেকেআর

তখন কলকাতায় এত গরম পড়ত না। মেট্রো চ্যানেল, শহীদ মিনার চত্ত্বর তখনও চাকরিহারাদের কান্না শোনেনি। তখনও আইপিএল ট্রফি দেখেনি কলকাতা। আইএসএলে খেলেনি ইস্ট-মোহন। তখন এ শহর শুধু ঘরের ছেলেকে খুঁজত! ইডেন থেকে সদ্য ঠিকানা বদলেছে তাঁর। ২০১২ সালের মে মাসের শুরুতে প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠেছিল ইডেন। টালা থেকে টালি, বালি থেকে বালিগঞ্জ সেদিন ঘরের ছেলের জন্য হাজির হয়েছিল নন্দনকাননে। পুনে ওয়ারিয়র্সের বিরুদ্ধে সেদিন কেকেআরকে চায়নি এ শহর। কলকাতার স্লোগান ছিল; সৌরভ তোমাকে চাই!

বছর পেরলে অচেনা হয়ে যায় অলি-গলি, পাড়া। যুগ পেরলে পাল্টে যায় প্রজন্ম। ইতিহাস কি বদলে যায়? টিভি স্ক্রিনে বারবার ফুটে উঠছে এক বিষণ্ণ মুখ। কপালে লাল তিলক। মাথার নীল টুপিতে ঢাকা পড়েছে মুখের অনেকটাই। ম্যাচের সেই তাঁকেই হাসি মুখে ইডেনের বেল বাজাতে দেখা গিয়েছে। সেই তিনিই কিনা আলোর ইডেনে, তাঁর নিজের ইডেনে অন্ধকার মুখে বসে। এ শহর আজও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। কিন্তু আইপিএলে কলকাতা এখন শুধু কেকেআরের।

দুপুর হোক আর রাতের শো, ইডেনে বেগুনি জার্সির সমাবেশে গণবিস্ফোরণ ঠিক হচ্ছে। সোমবারের ইডেনও কানায় কানায় ভর্তি। গ্যালারির টংয়ে বসেও গলা ফাটাচ্ছেন কেকেআর ভক্ত। হবে না কেন, এমন উত্তেজক ম্যাচ উপহার দিচ্ছে যে! রাজস্থানের পথে হেঁটে পঞ্জাব অবিশ্বাস্য জিতলেও। দিল্লি টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়া ছাড়া আর কিছু করেনি। বলা উচিত, ঋষভ পন্থ ওখানেই হেরে বসেছিলেন ম্যাচটা। পৃথ্বী শ, জ্যাক ফ্রেজার, শাই হোপ, অভিষেক পোড়েল, পন্থ; এলেন, দেখলেন এবং গেলেন। পরের ম্যাচগুলোয় কুলদীপ যাদবকে ওপেন করানো যায় কিনা, কোচ পন্টিং ভাবতেই পারেন। কুলদীপ সর্বোচ্চ ৩৫ করে গেলেন। না হলে আরও করুণ দেখাত দিল্লির স্কোর। পন্থের টিমকে ভাঙলেন বরুণ চক্রবর্তী, ৪ ওভারে ১৬ রান দিয়ে নিলেন ৩ উইকেট। ২টি করে শিকার বৈভব আরোরা ও হর্ষিত রানার। এ বারের আইপিএলে রানের সুনামি উঠছে প্রতি ম্যাচে। ইডেনে সবচেয়ে কম স্কোর করল দিল্লি। ১৫৪ টার্গেট দিয়ে এই আইপিএলে ম্যাচ জেতা যায় না।

গম্ভীরের টিম চ্যাম্পিয়ন হলে কৃতিত্ব কারা পাবেন? দুই ওপেনার! সুনীল নারিন আর ফিল সল্ট প্রতি ম্যাচেই তছনছ করে চলেছেন বিপক্ষকে। দিল্লিও বাঁচল না। ৩৩ বলে সল্টের ৬৮র ম্যাচের আর কী পরে থাকে! ঘটনা হল, দিল্লি ম্যাচটা হারল নিজের দোষেই। ১৫ রানের মাথায় খলিলের বলে সল্টের ক্যাচ মিস করলেন লিজাড উইলিয়ামস। না হলে বিপদের গন্ধ ছিল। নারিন (১৫) এই ম্যাচে পারলেন না। ২১ বল বাকি থাকতে দুই আইয়ার, শ্রেয়স ও ভেঙ্কটেশ বাকি কাজটা সেরে ফেললেন। শ্রেয়স করলেন ৩৩, বেঙ্কটেশ ২৬। ইডেনে ৯য়ে ৬ জয় নাইটদের। ১২ নিয়ে পয়েন্ট টেবলের দুইয়ে। প্লে-অফের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল গম্ভীরের টিম।

১২ বছর আগে ইডেনে খেলতে এসে পুনের সৌরভ হেরেছিলেন। সে বছর গম্ভীরের কেকেআর প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আইপিএল। ১২ বছর পর সৌরভ আর গম্ভীর ডাগআউটে। এ বারও কি ইতিহাস ফিরবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − 15 =