
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) বার্ষিক সাধারণ সভাকে কেন্দ্র করে রবিবার মুম্বই শহরে ছিল অন্যরকম উত্তেজনা। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এলেন প্রাক্তন বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন ধরে বোর্ডের শীর্ষ পদগুলির সঙ্গে নাম জড়ানো সৌরভ এ বার সম্পূর্ণভাবে বাইরে চলে গেলেন। প্রত্যাশিতভাবেই মুম্বইয়ে আয়োজিত সভায় পা রাখলেন না তিনি। সিএবি (ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল)-র সভাপতি হয়েও বোর্ডের সাধারণ সভায় প্রতিনিধিত্ব করলেন না বাংলার এই প্রাক্তন অধিনায়ক। ফলে ফের প্রশ্ন উঠেছে, এটি কি শুধুই অভিমান, নাকি রাজনৈতিক সমীকরণের কাছে নতিস্বীকার?
এক সময় শোনা যাচ্ছিল, ফের বোর্ড সভাপতির পদে দেখা যেতে পারে সৌরভকে। তাঁর ক্রিকেট প্রশাসনিক দক্ষতা, আন্তর্জাতিক মঞ্চে গ্রহণযোগ্যতা এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে জনপ্রিয়তা তাঁকে বড় দাবিদার করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিত্রপট ঘুরে যায়। বোর্ড সভাপতি পদে অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত মিঠুন মানহাসের নাম চূড়ান্ত হতে চলেছে। জম্মু-কাশ্মীরের ক্রিকেট উন্নতির সঙ্গে যুক্ত মিঠুনের হাতে বোর্ডের সর্বোচ্চ পদ তুলে দেওয়ার বিষয়টি অনেককে অবাক করেছে।
শুধু সৌরভই নন, বাংলার কোনও প্রতিনিধি এ বার বোর্ডের পদে জায়গা পাচ্ছেন না। বোর্ডের কোষাধ্যক্ষ, যুগ্ম সচিব, সহ-সভাপতি বা অন্য কোনও পদে বঙ্গ থেকে কাউকে দেখা যাবে না। স্বাভাবিকভাবেই বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে হতাশার ছায়া। অনেকের ধারণা, এই কারণেই সৌরভ এ বার সভায় যোগ দিতে চাননি। তাঁর অনুপস্থিতিকে অনেকে অভিমান হিসেবেই ব্যাখ্যা করছেন।
যদিও মুম্বইয়ের বৈঠকে একজন বাঙালি উপস্থিত থাকবেন। তিনি অভিষেক ডালমিয়া। তবে সিএবির প্রতিনিধি হিসাবে নয়, থাকবেন এনসিসি-র প্রতিনিধি হয়ে। আগেও তাঁকে আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দেখা গিয়েছে। এ বারও তাঁর উপস্থিতি বাংলার একমাত্র সান্ত্বনা।
সভায় অন্য পদগুলির ভাগাভাগিও কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। রাজীব শুক্লা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদেই বহাল থাকছেন। প্রভতেজ ভাটিয়া সম্ভবত যুগ্ম সচিব হচ্ছেন। আইপিএলের প্রধান হিসেবে অরুণ ধুমালই নিজের জায়গা ধরে রাখছেন। অন্যদিকে, রঘুরাম ভাট যিনি এক সময় বোর্ড সভাপতির দাবিদার হিসেবে উঠে এসেছিলেন, তিনি সম্ভবত কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পেতে চলেছেন।
সব মিলিয়ে বোর্ডের এই সাধারণ সভা কার্যত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করেই বেশি আলোচিত হল। যিনি এক সময় ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পদে থেকে প্রশাসনিক দক্ষতা দেখিয়েছিলেন, আজ তিনি বাংলার প্রতিনিধি হয়েও বোর্ডে জায়গা পাচ্ছেন না। এককালে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে বাংলার যে প্রভাবশালী অবস্থান ছিল, আজ তা প্রায় মুছে যাচ্ছে। ফলে আগামী দিনে বাংলার ক্রিকেট প্রশাসন কীভাবে নিজেদের অবস্থান পুনর্গঠন করে, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
এই সভার মাধ্যমে স্পষ্ট হল, বোর্ডের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এখন অনেকটাই রাজনৈতিক সমীকরণের উপর নির্ভরশীল। আর সেই অঙ্কের বাইরে চলে গিয়েই হয়তো এ বার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বাংলার ক্রিকেট বোর্ড একপ্রকার ছিটকে গেলেন বিসিসিআইয়ের কেন্দ্রীয় পরিসর থেকে।

