কলকাতা আবারও ঐতিহাসিক ইডেন গার্ডেন্সের এক নতুন অধ্যায় দেখতে চলেছে। ছয় বছর পর বাংলার ক্রিকেট প্রশাসনে ফিরলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সোমবার সিএবির ৯৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত একই পদে ছিলেন সৌরভ। সভাপতির আসনে বসেই সৌরভের প্রথম বড় ঘোষণা— ইডেন গার্ডেন্সে দর্শকাসনের সংখ্যা ফের এক লাখে নিয়ে যাওয়া হবে।
তিনি জানান, ২০১১ বিশ্বকাপের আগে সংস্কারের সময় আসনসংখ্যা ৬৮ হাজারে নেমে আসে। আগামী বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকেই শুরু হবে নতুন প্রকল্প। তাঁর কথায়, “এটা সময়সাপেক্ষ কাজ। লিজ় নবীকরণ হয়েছে। তাই বিশ্বকাপের পর হাত দেওয়া হবে।” সামনে অপেক্ষা করছে বড় চ্যালেঞ্জ। নভেম্বরে ইডেনে অনুষ্ঠিত হবে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট ম্যাচ। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দিন-রাতের গোলাপি বলের ঐতিহাসিক টেস্টের পর এই প্রথম ইডেনে টেস্ট আয়োজন করা হবে। সৌরভ বলেন, “এ নিয়ে এখনও ভাবিনি। হাতে দু’মাস সময় আছে। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। ভাল পিচ, দর্শক, পরিকাঠামো— সবই রয়েছে।”
এখানেই শেষ নয়। আগামী বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ইডেন গার্ডেন্সে হাই-প্রোফাইল ম্যাচের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি সৌরভ। এমনকি সেমিফাইনালও অনুষ্ঠিত হতে পারে এখানে। বিসিসিআইয়ের নতুন সভাপতির সঙ্গে শিগগিরই আলোচনায় বসবেন বলে জানান তিনি। নতুন বোর্ড নেতৃত্বকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সৌরভ বলেন, “ক্রিকেট খেলা সহজ, কিন্তু প্রশাসনিক দায়িত্ব কঠিন। তবে আমি নিশ্চিত ওরা ভাল কাজ করবে।” দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বাংলার ক্রিকেটকে আরও শক্তিশালী করতে আরেকটি বড় আর্থিক ঘোষণা করেন তিনি।
বাংলার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পরিকাঠামো শক্তিশালী করা এবং ডুমুরজালায় একটি নতুন অত্যাধুনিক একাডেমি চালু করার উপর জোর দিয়েছেন সৌরভ। যার জন্য সিএবি নয় একর জমি অধিগ্রহণ করেছে। সৌরভ বলেন, ‘‘নয় একর জমির উপর ডুমুরজলা একাডেমি হবে। এটি কল্যাণী একাডেমির মতো হবে। এতে ফ্লাডলাইট এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। আমরা এমন ক্রিকেটার তৈরি করতে চাই যারা অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।’’ রাজ্য ইউনিট ও জেলা অ্যাসোসিয়েশনগুলির অনুদান ৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এর ফলে জেলা ও গ্রামীণ স্তরে ক্রিকেটের উন্নতি ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রত্যাবর্তন শুধু ইডেনের গৌরব ফেরানোর প্রতিশ্রুতিই নয়, বাংলার ক্রিকেটের শিকড়কেও শক্তিশালী করার বার্তা দিল। ইডেনের ইতিহাসে ফের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে।

