নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঁকুড়া: সোনামুখীর তাঁত শিল্পে ভাটা, বর্তমান প্রযুক্তির কাছে হার মানছেন তাঁত শিল্পীরা, তবে পুজোর আগে কিছুটা হলেও ব্যস্ততায় শিল্পীরা।
বাঁকুড়া জেলার অতি প্রাচীন শহর সোনামুখী। এই সোনামুখী শহরের তাঁত শিল্পীর খ্যাতি জগৎজুড়ে, একটা সময় ছিল দূর্গা পূজার আগে সোনামুখীর তাঁত শিল্পীদের নাওয়া খাওয়ার সময় থাকত না, চরম ব্যস্ততায় থাকতেন তাঁতের শাড়ি তৈরি করতে। এমনকি এই তাঁতি পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্য হাত লাগাতেন এই কাজে, সোনামুখীর তাঁত শিল্পীদের হাতের তৈরি তাঁতের শাড়ি শুধুমাত্র ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে নয়, ভারতবর্ষ ছাড়িয়ে ভিন রাজ্যে পাডি üদিত। ফলে পুজোর আগে টানা দু’টি মাস চরম ব্যস্ততার মধ্যে থাকত এই তাঁত শিল্পীরা।
তবে আজ সে সব কথা শুধুই ইতিহাস। তাঁত শিল্পীরা জানাচ্ছেন, বর্তমান প্রজন্মের ছেলেরা শাড়ি তৈরির কাজ আর করতে চাইছে না, তারা পাড়ি দিচ্ছে ভিন রাজ্যে অন্য কাজের সন্ধানে। কারণ আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে তাঁত শিল্পে ভাটা পড়েছে। বর্তমান যুগে আধুনিক মেশিন বাজারে এসেছে ফলে হাতে তৈরি তাঁতের কদর কমেছে অনেকটাই। যেখানে একটা তাঁতের শাড়ি তৈরি করতে শিল্পীদের সময় লাগে তিন দিন, সেখানে দাঁড়িয়ে মেশিন দ্বারা একদিনে পাঁচ থেকে ছ’টি শাড়ি তৈরি করে ফেলছে নিমেষেই, স্বাভাবিক ভাবেই শিল্পীদের হাতে বোনা তাঁতের শাড়ির বাজার দরের থেকে মেশিনে তৈরি করা তাঁতের শাড়ির দাম অনেক কম।
তবে সোনামুখী শহরের তাঁত শিল্পীদের বছরের অন্যান্য সময় ততটা ব্যস্ততা না থাকলেও পুজোর একটা মাস কিছুটা চাহিদা থাকায় কিছুটা ব্যস্ততার মধ্যে দিয়েই তাঁদের দিন কাটছে। তাঁত শিল্পীরাও সারা বছর এই পুজোর দিকে তাকিয়ে থাকে কেননা এই পুজোর মাসে দুটো বাড়তি পয়সা ঘরে আসে। তাঁত শিল্পীরা জানাচ্ছেন, সোনামুখী পুরশহরে এক হাজার থেকে ১২০০ তাঁতি পরিবার রয়েছে প্রত্যেকেরই জীবন জীবিকা এই তাঁত শিল্পের ওপর নির্ভরশীল, এইভাবে বর্তমান প্রযুক্তির কাছে হার মানতে থাকলে আগামী দিনে তাঁদের সংসার ভেসে যাবে এমনটাই আশঙ্কা করছেন তাঁত শিল্পীরা।
তবে এ বিষয়ে সোনামুখী পুরসভার চেয়ারম্যান সন্তোষ মুখোপাধ্যায় জানান, রাজ্য সরকার তাঁত শিল্পীদের সার্বিক উন্নতির জন্য প্রভূত প্রচেষ্টা করছেন। আগামী দিনে পুরসভার তরফে তাঁদের সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে সব রকম প্রচেষ্টা চালানো হবে বলেই জানান তিনি।