মহেশ্বর চক্রবর্তী
হুগলি: অসাধ্য সাধন করেছে গ্রামের সেই ছেলেটাই, জানতেও পারেননি হুগলির আরামবাগবাসী। অথচ চন্দ্রযান-৩ এর বিক্রম ল্যান্ডারের চন্দ্রপৃষ্ঠে সফল অবতরণ নিয়ে দেশের অন্যদের মতোই তাঁরাও আনন্দে মেতেছেন। অবশেষে যখন আরামবাগ জুড়ে চাউর হল ডহরকুণ্ডু গ্রামের অরূপকুমার হাইত ছিলেন চন্দ্রযান-৩ মিশনে, তখন সকলের আনন্দ আর দেখে কে?
হুগলি জেলার আরামবাগের নাম অনেকে শুনলেও, ডহরকুণ্ডু গ্রাম ছিল লোকচক্ষুর আড়ালেই। এখন সেই প্রত্যন্ত গ্রামে একসময় বড় হওয়া অরূপকে নিয়েই স্থানীয় বাসিন্দাদের গর্বের শেষ নেই।
চন্দ্রযান-৩ মিশনের সাফল্যের কয়েকদিন পরে গ্রামের লোকজন জানতে পারেন অরূপ ছিলেন ওই মিশনে অন্যতম গ্রুপ ডিরেক্টর। মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হলেও তাঁর কীর্তির কথা বলেননি অরূপ। পরে তা জানাজানি হতেই গর্বে বুক ভরে যায় আরামবাগবাসীর। বৃদ্ধা মায়ের চোখেও অঝোরে ঝরে আনন্দ অশ্রু।
জানা গিয়েছে, ছোটবেলা থেকেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন অরূপ। রাতের পর রাত পড়াশোনা করতেন। আরামবাগের বড়ডোঙ্গল রমানাথ ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৮৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করেন অরূপকুমার হাইত। এই বিষয়ে স্কুলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পরেশ দুলে বলেন, ‘চন্দ্র অভিযান সফল করার নেপথ্যে আমাদের স্কুলের প্রাক্তনী আছে জেনে গর্ব বোধ করছি। আমাদের এই স্কুল থেকে বহু মেধাবী ছাত্র বিভিন্ন জায়গায় মাথা উঁচু করে কাজ করছে। ভারতের নাম উজ্জ্বল করছে।’ অন্য দিকে ওই স্কুলের সিনিয়ার শিক্ষিকা টুলু ভৌমিক বলেন, ‘অরূপ ১৯৮৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে। আমি ১৯৮৫ সালে এই স্কুলে ভূগোলের শিক্ষিকা হিসাবে যোগ দিই। ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করায় তখন থেকেই অরূপ স্কুলের মেধাবী ছাত্র হিসাবে পরিচিত ছিল। সরাসরি আমি না পড়ালেও ওর জন্য আমাদের খুব গর্ববোধ হচ্ছে।’
প্রবেশিকা পরীক্ষায় ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং দু’টোতেই সুযোগ পেলেও, দুর্গাপুর এনআইটি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি-টেক করেন অরূপ। ১৯৯০ সালে বি-টেক সম্পূর্ণ করার সঙ্গে সঙ্গেই ২১ বছর বয়সে ইসরোয় চাকরি পান। ইসরোয় বছর চার চাকরি করার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশেষ ছুটি নিয়ে বেঙ্গালুরু আইআইটি থেকে এমটেক করে ফের ইসরোয় জয়েন করেন।
চন্দ্রযান ৩-এর ‘ল্যান্ডিং’-এর সময় উচ্চতা নির্ণায়ক সেন্সর তৈরির সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। গ্রুপ ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করেন। মেধাবী ছেলে সম্পর্কে অরূপবাবুর মা গৌরীদেবী বলেন, ‘ভালো লাগছে। তবে ওই সব বিষয়ে ছেলে কিছু বলেনি। প্রত্যেক দিন সন্ধ্যাবেলা ফোনে কথা হয়। ইসরোয় চাকরি করে জানি। টিভিতে চন্দ্রযান নামার দৃশ্যও দেখলাম। কিন্তু আমার ছেলে যে ওই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত, তা সে ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি। পরে জেনেছি।’ অন্য দিকে অরূপের বড়দা আশিস হাইত বলেন, ‘ভাইয়ের জন্য গর্ব হচ্ছে।’ তিনি অবশ্য প্রথম থেকেই জানতে পেরেছিলেন। মায়ের বয়স হয়েছে তাই বলেননি।