আমের আচার ভিন রাজ্যে রপ্তানি করে স্বনির্ভর হচ্ছে মালদার কিছু মহিলা গোষ্ঠী

মালদা: কাঁচা আম থেকে আচার তৈরির প্রাথমিক প্রক্রিয়াকরণের কাজ করেই স্বনির্ভর হওয়ার পথ দেখাচ্ছে মালদার কয়েকটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। ঝড়-বৃষ্টিতে বিভিন্ন বাগান থেকে পড়ে যাওয়া কাঁচা আম সংগ্রহ করে তা কেটে প্যাকেটজাত করে বিভিন্ন সংস্থার কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে ইংরেজবাজার ব্লকের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দলটি। মালদা-মানিকচক রাজ্য সড়কের ধারে খোলা আম বাগানের মাঝে বসে চলছে কাঁচা আম কেটে প্যাকেটজাত করে বাইরে পাঠানোর কাজ। আর সেই আম থেকেই বিভিন্ন কোম্পানিগুলি আচার, জ্যাম, জেলি তৈরি করে থাকে। বিভিন্ন কোম্পানিগুলির কাছ থেকে কাঁচা আম প্যাকেটজাত করে সরবরাহ করার বরাত পেয়েছে ইংরেজবাজার ব্লকের কাজিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষ্মীপুর এলাকার একটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী দলের সদস্যরা। একইরকমভাবে ইংরেজবাজার, পুরাতন মালদা, চাঁচল, রতুয়া ব্লকের বেশ কিছু স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা এরকম কাঁচা আম প্যাকেটজাত করে বাইরে রপ্তানি করার কাজ করে থাকেন। লবণ দিয়ে কাঁচা আমকে প্যাকেটজাত করে পঞ্জাব, গুজরাত, মহারাষ্ট্র পাঠানোর কাজ শুরু করেছে ওই মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলো। তার ফলে মোটা টাকা উপার্জন করছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, মালদা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্মীপুর পাঁচ মাইল এলাকার রাস্তার ধারে আমবাগানে খোলা আকাশের নিচে বসে গ্রামের মহিলারা আম কাটার কাজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত করে চলেছেন। ঝড়ে পড়ে যাওয়া আমগুলো বাগান থেকে কুড়িয়ে এনে সে আমগুলি কাটা হচ্ছে। কাটা আমগুলো একটি ট্যাংকিতে ফেলা হচ্ছে এবং সেই কাটা আম গুলির উপরে লবণ চারিদিকে ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং তারপরই সেই লবণ মাখা কাটা আমগুলো প্যাকেটজাত করে গাড়িতে উঠিয়ে ভিন রাজ্যে পাঠানো হচ্ছে।
ওই মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দলের সদস্য রেণুকা বিবি, রাবিনা বিবি, মমতাজ বেগমদের বক্তব্য, এলাকার প্রায় ৪০ জন গ্রামীণ মহিলারা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দল গড়ে এই কাজ শুরু করেছেন। আম কুড়ানোর ক্ষেত্রে দলের কিছু সদস্যরা বিভিন্ন বাগানে ঘুরে বেড়ান। ঝরে পড়ে যাবা আমগুলি সংগ্রহ করা হয়। অথবা সস্তায় কাঁচা আম কেনা হয়। এরপর প্রতিদিন সকাল পাঁচটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এই আমগুলি কাটার কাজ করা হয়। কিন্তু প্রতিটি মহিলারা দিনে প্রায় ৪০ মন করে আম কাটেন। যার ফলে এক হাজার টাকা আবার কেউ বারোশো টাকা পর্যন্ত রোজগার করেন। চলতি মরশুমে দফায় দফায় কালবৈশাখীর ঝড়ের দাপটে মালদা জেলার অধিকাংশ বাগানে আয় প্রায় অর্ধেক ঝড়ে পড়েছে।
উদ্যান পালন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ঝরে প্রায় কুড়ি শতাংশ আম নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ঝড়ের জন্য এবারের জেলার আম বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। তবে ঝড় হওয়ার ফলে প্রচুর আম ঝরে পড়েছে গাছ থেকে। আর সেই আমগুলো বাগান থেকে কুড়িয়ে আমগুলো কেটে আচারের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিচ্ছে ভিন রাজ্যে। আম গুলি কেটে রোজগার হচ্ছে গ্রামীণ মহিলাদের।
মালদা ম্যাংগো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং ওয়েস্টবেঙ্গল এক্সপোর্টার কো-অর্ডিনেটর কমিটির সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা জানিয়েছেন, আচার তৈরি করার ক্ষেত্রে মালদার কাঁচা আম প্যাকেটজাত হয়ে গুজরাত, মহারাষ্ট্রে সবথেকে বেশি রপ্তানি হয়। এক্ষেত্রে গ্রামীণ এলাকার মহিলারা কাঁচা আমকে প্যাকেটজাত করার কাজ করে থাকেন। তবে এবারে আম ব্যবসায়ী ও চাষিদের আর্থিক লোকসানের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু যারা কাঁচা আম প্যাকেটজাত করার কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে এবারের মরশুমটা বেশ ভালো। ইতিমধ্যে ৬০ টন আম গুজরাত এবং মহারাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − 10 =