রাজু হত্যাকাণ্ডে নারায়ণকে নোটিশ সিটের, হাজিরা না দিলে বাজেয়াপ্ত করা হবে বিপুল সম্পত্তি

সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমান জেলার শক্তিগড়ে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে খুন হয়ে যান আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত রাজু ঝা। এই খুনের ঘটনায় তদন্তে নেমেছে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিট। তদন্তে নেমে এই খুনের ঘটনায় যোগসূত্রও পেয়েছে কয়লা পাচারে অভিযুক্ত নারায়ণ খাড়কার সঙ্গে। কারণ, নারায়ণের গাড়ির চালক অভিজিৎ মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরেই এই যোগসূত্র সম্পর্কে নিশ্চিত হন সিটের তদন্তকারী আধিকারিকেরা। এদিকে এই খুনের সঙ্গে জড়িতে থাকার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর গ্রেপ্তার করা হয় অভিজিতকেও। এরপরই নোটিসও পাঠানো হয়েছে বলে সিট সূত্রে খবর। সিটের তরফ থেকে পাঠানো এই নোটিশে এও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও যদি তিনি হাজির না দেন তাহলে তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। আর সেই সূত্রেই সিট খোঁজ খবর নিতে শুরু করে নারায়ণের কোথায় কোথায় কী কী সম্পত্তি রয়েছে সে ব্যাপারেও। এদিকে সিট সূত্রে খবর মিলছে, প্রাথমিকভাবে তাঁরা জানতে পেরেছেন, নারায়ণের প্রায় ৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে।
এরই প্রেক্ষিতে সিটের তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে যে, দুর্গাপুরে নারায়ণের বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জমি কেনা রয়েছে। এছাড়া ইস্পাতনগরীর বিভিন্ন প্রান্তে নামে বা বেনামে রয়েছে তাঁর বেশ কিছু ফ্ল্যাট। পাশাপাশি ভিন রাজ্যেও তাঁর বিনিয়োগ আছে। এছাড়া কয়লা সহ বিভিন্ন কারবারে তাঁর মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। ঠিকাদারির কাজেও তিনি টাকা বিনিয়োগ করছেন প্রচুর। ব্যাঙ্কেও একাধিক অ্যাকাউন্টে তাঁর টাকা জমা রয়েছে।
এদিকে রানিগঞ্জেও সম্পত্তির হদিশ করছেন সিটের তদন্তকারীরা। রাজু ঝা খুনের ঘটনায় তদন্তে নেমে সিটের সদস্যরা এটাও জানতে পেরেছে যে কয়লা কারবারে নামার পরেই নারায়ণের সম্পত্তির পরিমাণ নাকি উল্কার গতিতে বেড়েছে। দুর্গাপুরে থ্রি-স্টার হোটেল তৈরিতেও সে রাজুর পার্টনার হতে চেয়েছিল এই নারায়ণ। যদিও তার আগেই রাজুকে ছেড়ে সে অন্যের সিন্ডিকেটে যোগ দেয়। তারপরেও রাজুর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল নারায়ণ। থ্রি-স্টার হোটেল তৈরির খবর পেয়ে রাজুর সঙ্গে ফের যোগাযোগ শুরু করে নারায়ণ। কিন্তু রাজু তাঁকে আর পার্টনার বানাতে রাজি ছিলেন না। এরপর নারায়ণ তাঁর সঙ্গে হাসপাতাল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাতেও তিনি নাকি রাজি হননি রাজু।
আর এখানেই সিটের সদস্যরা এও জানান, নারায়ণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হাজিরা না দিলে কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর নামে ওয়ারেন্ট জারি করা হবে। এরপরই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। সেই কারণেই তাঁর সম্পত্তির হিসেব নেওয়া হচ্ছে। তদন্তে সহযোগিতা করার জন্যই তাঁকে ডাকা হয়েছিল।
এদিকে নারায়ণের গাড়ির চালক বহু তথ্য-ই নারায়ণ সম্পর্কে দিয়েছে সিটকে। নারায়ণের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল বলেও সে জেরায় জানিয়েছে। রাজু খুন হওয়ার পরেও তাদের দু’জনের দেখা হয়েছিল। নারায়ণের অফিসেও অভিজিৎ গিয়েছিল। সেই কারণেই তাঁকে জেরা করার প্রয়োজন রয়েছে। পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, কয়লা পাচারের অভিযোগে নারায়ণ আগেই গ্রেপ্তার হয়েছিল। বেশ কিছুদিন জেল খাটার পর জামিনে মুক্তি পায়। এরপর ফের ফেরে স্বমহিমায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve + fifteen =