শিলিগুড়ির মেয়ের ব্যাটে সুর বিশ্বজয়ের ! তৈরী হলো নতুন ইতিহাস

নবি মুম্বইয়ের ডি ওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে যখন ভারতের মেয়েরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো একদিনের বিশ্বকাপ জিতল, তখন গ্যালারির এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষরা একসঙ্গে চিৎকার করে উঠেছিলেন— “রিচা! রিচা!”। কারণ, এই জয়যাত্রার অন্যতম স্থপতি ছিলেন সিলিগুড়ির সেই তরুণী— রিচা ঘোষ।

মাত্র ২১ বছর বয়সেই ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের সবচেয়ে ভয়ংকর ফিনিশারদের তালিকায় নিজের নাম লিখিয়ে ফেলেছেন তিনি। রিচার ব্যাটিং মানেই আগ্রাসন, আত্মবিশ্বাস আর নির্ভীকতা। ছোট শহরের মেয়ে হয়েও যে বিশ্বমঞ্চে আলো ছড়ানো যায়, তার জীবন্ত উদাহরণ রিচা। ২০০৩ সালে সিলিগুড়িতে জন্ম রিচার। বাবা মানবেন্দ্র ঘোষ স্থানীয় ক্রিকেট সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ছোট থেকেই মেয়ের প্রতিভা চিনেছিলেন তিনি। শহরের ছেলেদের সঙ্গে মাঠে অনুশীলন করতেন রিচা— যেখানে গতি ছিল, বাউন্স ছিল, আর ছিল লড়াই। সেই লড়াই থেকেই গড়ে উঠেছে তাঁর মানসিক দৃঢ়তা।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে ভারতের জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক করেন রিচা। শুরুটা সহজ ছিল না। প্রথম কয়েকটি ম্যাচে সাফল্য না এলেও, নিজের খেলার ধরন বদলাননি তিনি। বরং আরও আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন। মিডল অর্ডারে নেমে দলের ইনিংসকে ধরে রাখা কিংবা শেষ ওভারে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ শেষ করা— দুটোতেই সমান পারদর্শী রিচা। তাঁর উইকেটকিপিং দক্ষতাও দলের বড় ভরসা। ২০২5 সালের বিশ্বকাপে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ।

রিচা ঘোষের ছোটবেলার কোচ শিব শংকর পাল আজও গর্বভরে বলেন, “ছোটবেলা থেকেই ওর মধ্যে ছিল আলাদা আগ্রাসন আর আত্মবিশ্বাস। বয়সে ছোট হলেও ছেলেদের সঙ্গে সমানতালে অনুশীলন করত। কখনও ভয় পেত না দ্রুত গতির বলকে, বরং চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিত। সকালে প্রথমে মাঠে আসত রিচা, আর শেষ পর্যন্ত থাকত সে-ই। আমি তখনই বুঝেছিলাম, মেয়েটি একদিন বড় কিছু করবে।” শিব শংকর পাল আরও বলেন, “আজ যখন দেখি রিচা ভারতের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে, মনে হয়— পরিশ্রম সত্যিই কখনও ব্যর্থ হয় না” । সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৬ বলে ২৬ রানের ইনিংস এবং ফাইনালে ৩৪ রানের অপরাজিত ফিনিশ— ভারতকে এনে দিয়েছে ইতিহাসের প্রথম মহিলা বিশ্বকাপ। রিচার সাফল্য শুধু একটি খেলোয়াড়ের গল্প নয়, এটি এক স্বপ্নের জয়।

ছোট শহরের মেয়েরা আজ তাঁর পথ অনুসরণ করছে, বুঝছে যে মেধা ও পরিশ্রম থাকলে কোনও বাধাই অদম্য নয়। আজ সিলিগুড়ির গলিতে গলিতে যে কণ্ঠ শোনা যায়, তা একটাই— “রিচার মতো হতে চাই।” আর রিচা? তিনি নিজেই বলেন, “স্বপ্ন দেখা বন্ধ কোরো না, কারণ একদিন সেই স্বপ্নই তোমাকে বিশ্বজয়ী করবে।” রিচা ঘোষ— ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন সংজ্ঞা, নতুন প্রেরণা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three + 6 =