লোনক হ্রদ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। দুর্যোগ নেমে আসার অনেক আগেই নাকি এই হ্রদ নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট (আইসিআইএমওডি)। একের পর এক মৃত্যুর খবর আসছে তিস্তার পাড় থেকে। বেরিয়ে আসছে দেহ। খোঁজ নেই বহু মানুষের। এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ শতাধিক। মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ১৪ জনের।
কীভাবে লোনক হ্রদের চেহারাটাই পাল্টে গিয়েছে, সেই উপগ্রহ চিত্রও প্রকাশ করেছে ইসরো। তবে লোনক লেকের এই অবস্থা কিন্তু আকস্মিক নয়। লোনাক নিয়ে ভয় ছিল দীর্ঘদিনের। এই সংস্থাটি উপগ্রহচিত্রের মাধ্যমে পুরো সিকিমে ৩২০টি হিমবাহ হ্রদের সন্ধান পেয়েছে। যেগুলির মধ্যে ১৪টি বিপজ্জনক বলে জানিয়েছিল তারা। সেই বিপজ্জনক হ্রদের তালিকায় ছিল দক্ষিণ লোনক হ্রদও।
আইসিআইএমওডি সূত্রে খবর, লোনক হ্রদ লোনক হিমবাহ সৃষ্ট। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৭ হাজার ১০০ ফুট উপরে লোনক হিমবাহটি রয়েছে। ২৬০ ফুট গভীর, প্রায় ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং আধ কিলোমিটার চওড়া এই হিমবাহটি। সব মিলিয়ে ১.২৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই হিমবাহ। লোনক হ্রদও ১৬৮ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই হ্রদের আয়তন এবং গভীরতা দ্রুত বাড়ছিল। হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদ হলেও এতে জল বেশি ছিল না। কিন্তু গত পাঁচ দশকে এই হ্রদের গভীরতা দ্রুত বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে জলস্তরও। বর্তমানে এই হ্রদের গভীরতা ১০ তলা বাড়ির সমান। দৈর্ঘ্যে আড়াই কিলোমিটার এবং প্রস্থে ৬০০ মিটার। হ্রদের এই দ্রুত পরিবর্তনে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, মেঘভাঙা বৃষ্টি হলে মহাবিপদ নেমে আসবে সিকিমে। মঙ্গলবার লোনক হ্রদ ফেটে বিপুল পরিমাণ জল তিস্তায় নেমে আসে। যার জেরে হড়পা বানের সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার লোনক হ্রদ ফেটে সিকিমে যে দুর্যোগ নেমে এসেছে, তার নেপথ্যে ‘গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড’ (জিএলওএফ) রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ হিমবাহ গলতে থাকায় হ্রদে বিপজ্জনক ভাবে জলের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ফলে হ্রদের দেওয়ালে ক্রমশ চাপ বাড়তে থাকে। সেই চাপ সহ্য করতে না পেরে হ্রদ ফেটে যায়।