হিট অ্যান্ড রান কেসে ধৃত শুভেন্দুর গাড়িক চালক

হিট অ্যান্ড রান কেসের অভিযুক্ত শুভেন্দু অধিকারীর গাড়িচালক গ্রেপ্তার। বৃহস্পতিবার রাতেই দিঘা–নন্দকুমার ১১৬ বি জাতীয় সড়কের চণ্ডীপুরের কাছে দ্রুতগতির গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারান স্থানীয় এক যুবক। সাইকেলে তিনি রাস্তা পেরনোর সময় পিছন থেকে দ্রুতগতিতে এসে গাড়ি ধাক্কা দেয়। কনভয়ের সামনের দিকে থাকা গাড়ি তাঁকে ধাক্কা মারে বলে সূত্রে খবর। এরপর আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই যুবককে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত যুবকের নাম শেখ ইসরাফিল। তিনি চণ্ডীপুরের ভৈরবপুর এলাকার বাসিন্দা। বিরোধী দলনেতার জেলার যুবকে তাঁরই গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ যাওয়ার ঘটনায় এই ইস্যুতে রাস্তায় নেমে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এমনকী এই ইস্যুকে সামনে এনে শুভেন্দু অধিকারীকে গ্রেপ্তারের দাবিও উঠতে শুরু করেছে।ফলে সব মিলিয়ে উত্তপ্ত রাজ্য–রাজনীতি।
এদিকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কনভয়ের ধাক্কাতেই মৃত্যু হওয়া ইসরাফিলের বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবারের সদস্যরাও। এদিকে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এই ঘটনা নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি বিরোধী দলনেতা।
এদিকে পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে,, হিট অ্যান্ড রানের অভিযোগে বিরোধী দলনেতার কনভয়ের গাড়ির যে চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁর নাম আনন্দ কুমার পাণ্ডে। সে সিআরপিএফ কনস্টেবল। এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ। আর তদন্তে নেমেই এই আনন্দ কুমার পাণ্ডের নাম হাতে আসে। এরপর তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেরা করাও হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।‌ গোটা ঘটনায় পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ কে বলেন, ‘‌চণ্ডীপুরে পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। শুভেন্দু অধিকারীর কনভয়ের ধাক্কায় দুর্ঘটনা বলে অভিযোগ এসেছে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখছি। এখনও স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পাশাপাশি ঠিক কি ঘটনা ঘটেছে সেটা আমরা খতিয়ে দেখার পরেই এই নিয়ে বিশদ বলতে পারব। এই ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। বিশদে তদন্ত চলছে। তারপরেই সবদিক খোঁজ নিয়ে আমরা প্রকৃত ঘটনা কি ঘটেছে সেই সম্পর্কে মন্তব্য করতে পারব।’‌
এদিকে এই ঘটনা নিয়ে আন্দোলনের পরিকল্পনা শুরু হয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে। রাস্তায় নামেন চণ্ডীপুরের বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, বীরবাহা হাঁসদা, দেবাংশু ভট্টাচার্য, দোলা সেন, জয়া দত্ত, সুদীপ রাহারা।
পাশাপাশি শুক্রবার সকালেই মৃতের বাড়ি পৌঁছে যায় তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। এবার এই দুর্ঘটনায় মৃতের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয় তৃণমূলের তরফ থেকে।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার সকালে চণ্ডীপুরে মৃতের বাড়ির সামনে থেকেই বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে তৃণমূল। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী, রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি, রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন। এছাড়াও ছিলেন সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাংশু ভট্টাচার্য, তন্ময় ঘোষ, জয়া দত্ত, বীরবাহা হাঁসদা, সুদীপ রাহা-রা। একইসঙ্গে দাবি করা হয়, শুভেন্দু অধিকারীকে গ্রেপ্তারিরও। মিছিল শেষে শেখ ইসরাফিলের মরদেহে মাল্যদানও করেন তাঁরা।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে শুভেন্দু অধিকারীর কনভয়ে থাকা সমস্ত গাড়ির চালককে নোটিস পাঠানো হয় পূর্ব মেদিনীপুর ডিএসপি হেড কোয়ার্টার থেকে। এছাড়াও কনভয়ের সব নিরাপত্তারক্ষীদেরও নোটিস পাঠিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে কী ঘটেছিল, দুর্ঘটনার সময় গাড়ির গতিবেগ কত ছিল, সেসব নিয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল শুরু থেকেই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছে। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ শুক্রবার সকালে বলেন, ‘পিষে মেরে দেওয়ার পর শুভেন্দু কনভয় থামিয়ে উদ্ধারের মানবিকতা দেখাননি। পালিয়ে গেছেন। আসানসোলেও একইভাবে পালিয়ে গেছিলেন। ফেরার আসামী শুভেন্দুর গ্রেপ্তার চাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × one =