শেষ দিনে শামির আগুন বোলিং ! জয় দিয়ে রনজি যাত্রা শুরু বাংলার

রনজি ট্রফির প্রথম ম্যাচেই নাটকীয় জয় তুলে নিল বাংলা। ম্যাচের প্রথম তিন দিন পর্যন্ত ফলাফল যে কোনও দিকে যেতে পারত, তৃতীয় দিনের শেষে অনেকেই ভেবেছিলেন ম্যাচটি হয়তো ড্র হয়ে যাবে। কিন্তু চতুর্থ দিনে একেবারে নতুন রূপে দেখা গেল বাংলাকে—বিশেষ করে মহম্মদ শামিকে। প্রবল সমালোচনার মুখে থাকা এই অভিজ্ঞ পেসার যেন চুপ করে থেকে উত্তর দিলেন উইকেট দিয়ে। তাঁর আগুনে বোলিংয়ের দৌলতেই উত্তরাখণ্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে টুর্নামেন্টে দারুণ সূচনা করল অভিমন্যু ঈশ্বরণের নেতৃত্বাধীন বাংলা দল।

চতুর্থ দিন শুরু হয়েছিল উত্তরাখণ্ডের ব্যাট হাতে। আগের দিন ২ উইকেটে ১৬৫ রান তুলে তারা ৫৫ রানে এগিয়ে ছিল। অপরাজিত ছিলেন কুণাল চান্ডেলা (৬৮*)। কিন্তু শনিবারের সকালই যেন নিয়ে এল ঝড়। ইনিংসের শুরুতেই মাত্র ৪ রান যোগ করে শামির এক নিখুঁত ইনসুইং ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন চান্ডেলা। সেখান থেকেই শুরু হয় পতনের ধারা। শামির দাপটে একের পর এক ব্যাটারকে ফিরিয়ে দিয়ে চাপে ফেলে দেন উত্তরাখণ্ডকে। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দেয় আকাশ দীপ ও ঈশান পোড়েল। এই দুই তরুণ পেসারও দুর্দান্ত স্পেল দেন, প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের বারবার সমস্যায় ফেলেন গতি ও সঠিক লাইন-লেংথে।

একসময় উত্তরাখণ্ডের স্কোরবোর্ডে ১৮৯ রানে ৬ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে যুবরাজ চৌধুরী ও অভয় নেগি ৬৪ রানের জুটি গড়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই প্রতিরোধও বেশিক্ষণ টিকল না। শামি ফের আক্রমণে ফিরে এসে ভেঙে দিলেন জুটিটা। নেগিকে আউট করেই কার্যত উত্তরাখণ্ডের লড়াইয়ের ইতি টানলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত উত্তরাখণ্ড দ্বিতীয় ইনিংসে অল আউট হয়ে যায় ২৬৫ রানে। বাংলার হয়ে শামি ৩৮ রানে ৪ উইকেট নেন। আকাশ দীপ ও ঈশান পোড়েল প্রত্যেকে ২টি করে উইকেট পান। বাকি দুই উইকেট ভাগ করে নেন সুরজ সিন্ধু জয়সওয়াল ও সুনীল ভাটি।

জয়ের জন্য বাংলার সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৫৬ রান। রান তাড়া করতে নেমেই শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলেন অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরন। তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৮২ বলে অপরাজিত ৭১ রানের ইনিংস—যা পুরো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। অন্য প্রান্তে সুদীপ কুমার ঘরামিও গুরুত্বপূর্ণ ৪৬ রান করেন, যা দলের জয়ে বড় ভূমিকা নেয়। মাত্র ২৯.৩ ওভারে ৮ উইকেট হাতে রেখেই লক্ষ্য তাড়া করে নেয় বাংলা।

এই জয়ের মাধ্যমে বাংলা দল শুধু ৬ পয়েন্ট অর্জন করল না, আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে নিল পরবর্তী ম্যাচগুলির জন্য। তবে ম্যাচের আসল নায়ক নিঃসন্দেহে মহম্মদ শামি। দুই ইনিংস মিলিয়ে তিনি মোট ৭ উইকেট তুলে নিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা। তাঁর পারফরম্যান্সে পরিষ্কার বার্তা—অভিজ্ঞতা ও মেধা এখনও অটুট। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়ার আক্ষেপটা এই পারফরম্যান্সের মাধ্যমে হয়তো আরও বাড়ল নির্বাচকদের কাছে। চতুর্থ দিনের এই দুরন্ত বোলিং প্রমাণ করে দিল, অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতের দলে তাঁর উপস্থিতি হলে সেটাই হতো দলের জন্য বাড়তি শক্তি।

এই জয় শুধু এক ম্যাচের জয় নয়, বরং দলের ঐক্য, লড়াইয়ের মনোভাব ও নেতৃত্বের নিখুঁত উদাহরণ। রনজির প্রথম ম্যাচেই এমন প্রত্যাবর্তন বাংলা ক্রিকেটের জন্য বড় আশার ইঙ্গিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − one =