শিলিগুড়ি : বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে দেশের নানা প্রান্তে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা হেনস্তার শিকার—এই অভিযোগকে ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর ক্রমশই তীব্র হয়ে উঠছে। এই বিতর্কে এবার সরব হলেন বিজেপির নবনিযুক্ত রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ কারও জন্য উন্মুক্ত আশ্রয়স্থল নয়। যে খুশি যেমন খুশি এখানে ঢুকে পড়বে—এটা বরদাস্ত করা হবে না।’’
সোমবার রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের সফরে এসে শিলিগুড়ির আরএসএস কার্যালয়ে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীরা ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। এই বিষয়টা রাজনৈতিক দলের চেয়ে নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক স্তরের গুরুতর উদ্বেগের।’’
তাঁর প্রশ্ন, ‘‘তামিলনাড়ুতে কী চলছে? অন্ধ্রপ্রদেশে কেন পরিচয়পত্র যাচাই করা হচ্ছে? এটা কি শুধু বিজেপিশাসিত রাজ্যের কাজ? অবিজেপি রাজ্যগুলিও বাংলাদেশিদের ভুয়ো নথি নিয়ে শঙ্কিত। তাহলে এর দায় শুধু বিজেপির ঘাড়ে চাপানোর রাজনীতি কেন?’’
তৃণমূল কংগ্রেস যেখানে বলছে, পশ্চিমবঙ্গবাসীদের বাংলাদেশি বলে ধরা হচ্ছে, শমীক সেখানে তৃণমূলকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা পশ্চিমবঙ্গে বসে ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করছে। প্রশাসন নিশ্চুপ। এই দোষের দায় ঘুরিয়ে বিজেপির ওপর চাপাতে চাইছে শাসকদল।’’
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ইস্যুর পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন নিয়েও মুখ খোলেন শমীক। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরকন্যা বানিয়ে লোকদেখানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর আমলে উত্তরবঙ্গের জন্য প্রকৃত কোনও কাজ হয়নি। বরাদ্দ অর্থের অর্ধেকও খরচ হয় না। জাতপাতের বিভাজনকে হাতিয়ার করে এখানে রাজনীতি চলছে। আমরা চাই ঐক্যবদ্ধ, অবহেলিত উত্তরবঙ্গের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক।’’
আগামী ২১ জুলাই বিজেপির ঘোষিত ‘উত্তরকন্যা অভিযান’-এর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘এটা শুধু একটি কর্মসূচি নয়, উত্তরবঙ্গের দাবিদাওয়ার লড়াইয়ের সূচনা। পুলিশ অনুমতি না দিলেও, আমরা কোনও ভজন-গোষ্ঠী নই। রাজনৈতিক দলের স্বাভাবিক কর্মসূচি আটকাতে এলে আমরা রাজনৈতিকভাবে তার জবাব দেব।’’
তিনি আরও জানান, ২১ তারিখের ওই কর্মসূচিতে তিনি নিজে এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত থাকবেন।বিমানবন্দরে পা দিয়েই দলীয় কর্মীদের স্বাগত পেয়ে শমীক সোজা চলে যান শিলিগুড়ির মাধব ভবনে। সেখানে উত্তরবঙ্গের আরএসএস নেতৃত্বদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। বৈঠক সেরে রওনা দেন আলিপুরদুয়ারের দিকে।
যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার মানুষ তৃণমূলের অপশাসনের জবাব দেবে। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ ভোট হোক। জনগণ প্রস্তুত, তৃণমূলের বিদায়ের ঘন্টা বেজে গেছে।’’

