পুলিশ তাঁকে খুঁজে পাচ্ছে না। অথচ আইনজীবী মারফৎ হাইকোর্টে বার্তা পাঠাচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যে আদালতে ইডি তাঁকে বাংলার ওসামা বিন লাদেন বলে কটাক্ষও করেছে ইডি। কলকাতা হাই কোর্টে ইডির আইনজীবী বলেন, ‘ওসামা বিন লাদেনের মতো ভয়েস মেসেজ করছেন শাহজাহান। তার পরেও পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না?’
বিতর্কিত তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান। স¨েশখালিতে যে নেতার বাড়িতে অভিযান চালাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিল ইডি, সেই শাহজাহানের টিকিও নাকি ছুঁতে পারছে না পুলিশ। অথচ সকলের অলক্ষ্যে বসে দিব্যি তিনি ফেসবুক করছেন! ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে শুক্রবার শেখ শাহজাহানের ফেসবুক পেজে স্টেটাস আপডেট হয়েছিল। বদলে গিয়েছিল কভার ফটো। ছিল রিপাবলিক ডে’র পোস্ট। তবে এই মুহূর্তে সেই কভার ফটো-সহ পোস্ট উধাও। আর দেখা মিলছে না সেই পোস্টের।
সন্দেশখালিতে ইডির উপর আক্রমণের পর ২২ দিন কাটলেও এখনও অধরা শেখ শাহজাহান। তাঁকে নিয়ে রাজনীতির আঙিনায় জোরদার বিতর্ক হলেও এখনও তাঁর টিকি পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি পুলিশ। এরইমধ্যে ফেসবুক পোস্ট সামনে আসতেই তা নিয়ে হইচই শুরু হয়ে গিয়েছিল। ফেসবুকে স্টেটাস বদলাচ্ছেন শাহজাহান, আর রাজ্য পুলিশ তার স্টেটাস জানতে পারছে না কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই, ডিলিট সেই পোস্ট।
পোস্টের সূত্র ধরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা শাহজাহানের হদিস পেতে চাইছেন, এই খবরও ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই ডিলিট করা হয় সেই ফেসবুক পোস্ট। তা নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন চাপানউতোর। এদিকে শাহজাহানকে নিয়ে মন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদের স্পষ্ট বক্তব্য, যা করেছে তা অন্যায় করেছে শাহজাহান। তিনি জানান, ‘আমি গণমাধ্যমে দেখেছি, মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারি আধিকারিকদের। যেটা করেছে নিশ্চিত করে বলছি অন্যায় করেছে।’
ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, রাজ্যের অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং হেভিওয়েট মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম যখন এই মন্তব্য করছেন তার পিছনে নিশ্চিত রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এটা পরিষ্কার, দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দিষ্ট করে সবুজ সংকেত দিয়েছেন শাহজাহান থেকে দলকে ধীরে ধীরে সরে আসার, এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যেখানে বারবার করে সন্দেশখালির নেতাকে দলের তরফে বিভিন্নভাবে গার্ড করার চেষ্টা করা হয়েছে, সেখানে আচমকাই এদিনের এই বিস্ফোরক মন্তব্য বিরোধীপক্ষকেও পাল্টা চাপ তৈরি করার রাস্তা করে দিল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
একইসঙ্গে এ প্রশ্নও উঠছে যে, শাহজাহান কাণ্ডে লোকসভা নির্বাচনের আগে কি বেকায়দায় পড়ল শাসকদল? আর সেই কারণেই সন্দেশখালির অত্যন্ত প্রভাবশালী এই নেতার মাথার উপর থেকে হাত তুলতে শুরু করে দিল শাসকদল। অতীতে জনরোষ থেকে বাড়ির মধ্যে ঢুকে ইডি আধিকারিকদের অত্যাচার, একাধিক তত্ত্ব খাড়া করেছিল শাসকদল। কিন্তু কোনও কিছুই যে শাসকদলের পক্ষে যাচ্ছে না। সেটা বুঝতে পেরেই কি দলের হেভিওয়েট মন্ত্রীর এই মন্তব্য, উঠছে প্রশ্ন।
এই লাখ টাকার প্রশ্নই এখন ঘোরাফেরা করছে নানা মহলে। কেউ বলছেন, বাইরে পালিয়েছেন। আবার কেউ বলছেন, এলাকাতেই গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। এলাকারই কিছু লোক তাঁকে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করছে। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। যদিও সিবিআইয়ের সঙ্গে যৌথ সিট গড়ে আদালতের নির্দেশে চলছে তদন্ত।