ইডি আধিকারিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তৃণমূলের একসময়ের দাপুটে নেতা শেখ শাহজাহান ব্যাকফুটে যেতেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন স¨েশখালির বাসি¨ারা। শাহজাহান ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে জমি দখল, অত্যাচার-সহ ভূরি ভূরি অভিযোগ জানিয়েছিলেন গ্রামবাসীর একটা বড় অংশ।
এবার ইডি বিশেষ আদালতে সেই দাবি করল। সোমবার আদালতে ইডির আইনজীবী দাবি করেন, আদিবাসীদের জমি দখল করতেন শাহজাহান শেখ। তার পর টাকার বিনিময়ে সেই জমি অন্যদের ব্যবহার করতে দিতেন! জমি বিক্রির বা লিজের কালো টাকা সাদা করা হত চিংড়ির ব্যবসায়। ইডির আর্জি মেনে এদিন আদালত শাহজাহানকে ইডি হেফাজতে পাঠিয়েছে। ১৩ এপ্রিল তাকে ফের আদালতে হাজির করানো হবে।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দাবি করেছে, সন্দেশখালিতে সিন্ডিকেট চালাতেন শাহজাহান। সেই সিন্ডিকেটের ‘কিংপিন’ তিনি নিজেই। শাহজাহানের ঘনিষ্ঠদের এই সিন্ডিকেটের সদস্য হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষ নিজেদের ভেড়ির মালিক দেখিয়েও উপার্জন করেছেন বলে দাবি ইডির। তাদেরদাবি, জমি দখলের কালো টাকা চিংড়ি ব্যবসার লেনদেন হিসাবে সাদা করে দেখানো হত। সেই ব্যবসা শাহজাহানের মেয়ে শেখ সাবিনার নামাঙ্কিত। ইডির দাবি, চিংড়ি বেচা-কেনা করে দুর্নীতির টাকা নয়ছয় করা হয়েছে।
আদালতে ইডি দাবি করে, কিছু নথি দেখিয়ে জেরা করার সময় তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন শাহজাহান। প্রশ্নও এড়িয়ে গিয়েছেন। এ ছাড়াও তদন্তে বেশ কয়েকটি নতুন নাম উঠে এসেছে। ইডির আশঙ্কা, এই পরিস্থিতিতে শাহজাহানকে হেপাজতে নিয়ে জেরা করা না হলে, যাঁদের নাম উঠে এসেছে, তাঁরা পালিয়ে যেতে পারেন বা নাগালের বাইরে চলে যেতে পারেন।
একদিকে যখন শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ তুলে ধরছেন ইডির আইনজীবী, অন্য দিকে, শাহজাহানের গ্রেপ্তারির বৈধতা নিয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী জাকির। তাঁকে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করানো হয়নি বলে আদালতকে জানান তিনি। তাঁর দাবি, যে সকল এফআইআরের ভিত্তিতে শাহজাহানের বিরুদ্ধে ইডি ইসিআইআর (এনফোর্সমেন্ট কেস ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট) দায়ের করেছে, তার মধ্যে প্রথম দিকের চার্জশিটে নাম নেই শাহজাহানের।
গত শুক্রবার সিবিআইয়ের হেপাজত থেকে শাহজাহানকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছিল। শনিবার সকালে বসিরহাট আদালতে বেআইনি ভাবে জমি দখল এবং মাছ আমদানি রফতানি ব্যবসার মামলায় শাহজাহানকে সংশোধনাগারে গিয়ে জেরা করার আবেদন করেন ইডির আইনজীবীরা। আদালতের সম্মতি মেলার পর শনিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত শাহজাহানকে সংশোধনাগারে গিয়ে জেরা করেন ইডির তদন্তকারীরা।
সোমবার ইডির বিশেষ আদালতে শেখ শাহাজাহানকে তোলার সময় আইনজীবীদের একাংশ তাঁর ফাঁসি চেয়ে স্লোগান তোলেন।