নিজস্ব প্রতিবেদন, নয়া দিল্লি: পলিগ্রাফ-নার্কো টেস্ট এবং আরও কিছু প্রযুক্তিগত পরীক্ষা ও তদন্তের পরেই দিল্লি পুলিশের দাবি, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগুলির মাধ্যমেই শ্রদ্ধা হত্যার ঘটনার একদম গভীরে পৌঁছতে পেরেছেন তাঁরা। গত মাসে সামনে আসে শ্রদ্ধা ওয়ালকর হত্যাকাণ্ডের কথা। ছ’মাস আগে শ্রদ্ধাকে খুন করে তাঁর দেহ টুকরো করে ফ্রিজে ভরে রেখেছিল সঙ্গী আফতাব। এরপর ঘটনার তদন্তে নেমে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্য নেন তদন্তকারীরা। যেমন, শ্রদ্ধা এবং আফতাবের মোবাইল ফোন টাওয়ার লোকেশন, কল রেকর্ড খতিয়ে দেখার পাশাপাশি পলিগ্রাফ পরীক্ষা করা হয় আফতাবের। সূত্রে খবর, খুনের আগে ১৩ এবং ১৪ মে দিল্লির ছত্তরপুরেই বদ্রি নামে এক পরিচিতের বাড়িতে ছিল দু’জনে। ১৪ মে রাতে শ্রদ্ধা এবং আফতাবের মধ্যে বিবাদ চরমে ওঠে। যার জেরে রাত দুটোর সময় বদ্রি তাঁদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। এরপরে একটি গেস্ট হাউসে গিয়ে ওঠেন দুজন। দিল্লিতে তখনও তাঁদের কোনও থাকার জায়গা ছিল না। ১৫ এবং ১৬ মে এক বন্ধুর বাড়িতে থাকা পর ১৭ মে ছত্তরপুরের এক কামরার ফ্ল্যাট ভাড়া নেন দু’জনে। এরপর দিনই খুন হয়ে যান শ্রদ্ধা।
সূত্রে খবর, আফতাব তদন্তকারীদের জানিয়েছে ১৭ মে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপ হওয়া এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে শ্রদ্ধা গুরুগ্রাম যান । শ্রদ্ধার ফোনের কল রেকর্ড এবং টাওয়ার লোকেশন দেখে পুলিশও এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে। সেদিন আর বাড়ি ফেরেননি শ্রদ্ধা। ১৮ মে বেলায় বাড়ি শ্রদ্ধা ছত্তরপুরের ফ্ল্যাটে ফিরতেই এই নিয়ে আফতাবের সঙ্গে তাঁর বচসা হয়। এই অশান্তির জেরেই তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করে আফতাব।
সূত্রের খবর ১৯ মে মুম্বই যাওয়ার কথা ছিল আফতাবের। তবে, শ্রদ্ধা খুনের পর মুব্বই-যাত্রা বাতিল করে সে। ছুরি-কাঁচি কিনে আনে দেহ টুকরো করার জন্য। সূত্রের খবর পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রথমে শ্রদ্ধার অন্ত্রের অংশ কেটে ফেলে সে। এরপর গোড়ালি, কবজি টুকরো করে। কিছু দেহাংশ আলমারিতেও রেখেছিল আফতাব। আলমারিতে রক্তের দাগ পেয়েছে পুলিশ। তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন, খুনের পর একদিন বাড়িতে জল না থাকায়, বাইরে থেকে প্রচুর জলও কেনে আফতাব।
এদিকে নারকো টেস্টে আফতা স্বীকার করেছে আগেই যে সে একাই শ্রদ্ধাকে খুন করেছিল। পাশাপাশি সে এও জানায়, কী ভাবে শ্রদ্ধাকে হত্যা করেছিল। কী ভাবে তাঁর দেহের টুকরো করেছিল। সেই টুকরোগুলি কোথায় ফেলেছিল এবং গোটা অপরাধটিকে ধামাচাপা দিতে সে কী পন্থা অবলম্বন করেছিল। এই সবই আফতাব তার অবচেতন মন থেকে বলেছে। আর এখানেই তার পলিগ্রাফ টেস্ট, পুলিশি বয়ানের সঙ্গে অসঙ্গতি ধরা পড়েছে নারকো টেস্টের রেজাল্টে। প্রাথমিকভাবে এই অসঙ্গতি ধরেন দিল্লি পুলিশ আধিকারিকেরা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। যদিও দু’ঘণ্টা ধরে চলা আফতাবের নারকো টেস্টের সম্পূর্ণ রেজাল্ট প্রকাশ করতে এখনও কিছুটা সময় লাগবে বলেই জানিয়েছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। তবে ঘটনার শিকড়ের যে তাঁরা পেয়ে গেছেন সে ব্যাপারে নিশ্চিত তাঁরা।