যাদবপুরে সমাবর্তনের দিন ছাত্র বিক্ষোভ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। একেবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রিপ্লে। শনিবার সমাবর্তনে একদিকে যখন উপস্থিত নতুন রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সিভি আনন্দ বোস তখনই ছাত্র সংসদের ভোটের দাবিতে ব্যানার-পোস্টার হাতে স্লোগান তোলেন ফেটসুর সদস্যরা। একইসঙ্গে সোচ্চার হয় এসএফআইও। তাঁদের বক্তব্য, ২০২০ সালে শেষ ছাত্র সংসদের ভোট হয়। এরপর আর নির্বাচন হয়নি। এরপরই বিক্ষোভের মাঝখান দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ নম্বর গেট দিয়ে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রেখে রাজ্যপালকে ভিতরে প্রবেশ করানো হয়। ওপেন এয়ার থিয়েটারে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।বাইরে লাগাতার স্লোগান দিতে থাকেন বামপন্থী সংগঠনের সদস্যরা।জানা গিয়েছে, এই বিক্ষোভে সামিল রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, ফ্যাকাল্টি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের পড়ুয়ারা।
আন্দোলনকারী জানান, ‘গত তিন বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনওরকম কোনও ছাত্র সংসদের ভোট হয়নি। অগণতান্ত্রিকভাবে সমস্ত নীতি আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে কর্তৃপক্ষের দ্বারা। ছাত্রছাত্রীদের ইউনিয়নকে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়ার একটা প্রয়াস চলছে। এটা আমরা মানব না। আমাদের স্পষ্ট দাবি, অবিলম্বে ইউনিয়ন ইলেকশন করানো হোক। ছাত্র ছাত্রীদের অধিকারের জায়গা এটা।’ পাশাপাশি এও জানানো হয়,’ শনিবার বহু পড়ুয়া সমাবর্তন থেকে ডিগ্রি নিচ্ছেন না। তাঁরা ভিতরে জানাবেন, তাঁরা ভোট চান। আমাদের এই লড়াই ভোট চেয়েই।’ পাশাপাশি তাঁরা এও জানান, রাজ্যপালকে অসম্মান করার কোনও ভাবনা তাঁদের মনে নেই। দাবি একটাই, ছাত্র সংসদের ভোট হোক দ্রুত।
এর আগেও সমাবর্তনের মঞ্চে শংসাপত্র নিয়ে অস্বীকারের ছবি দেখা গিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০১৪ সালে ‘হোক কলরব’ ঘিরে যখন উত্তাল যাদবপুরের ক্যাম্পাস। সেই সময় ডিগ্রি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন গীতশ্রী সরকার নামে এক ছাত্রী। ২০১৯ সালে সিএএ-এনপিআর বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদে উত্তাল হয় যাদবপুর। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা দেন। ওঠে গো ব্যাক স্লোগান। তাঁর গাড়ি আটকানোর অভিযোগ ওঠে এসএফআই সহ একাধিক রাজনৈতিক সংগঠনের পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে।২০২১ সালেও সেই ঘটনার কথা উস্কে দেন ছাত্রী দেবস্মিতা চৌধুরীও। সমাবর্তন মঞ্চে স্বর্ণপদক নিতে গিয়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিলিপি ছিঁড়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী দেবস্মিতা বলেছিলেন, ‘হাম কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গে’।’ একাধিকবার এই সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ঘেরাও হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস।
তবে এদিন সমাবর্তনের হলে কোনও স্লোগানিং হয়নি। যা হয় তা বাইরেই। ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ এই দিনে তাঁরা দাবিদাওয়া নিয়ে সোচ্চার হওয়ার জন্য কেন বেছে নিলেন তা নিয়ে। এদিকে যাঁরা ছাত্র সংসদের দাবি নিয়ে সরব হন তাঁদের বক্তব্য, এরকম একটা দিন যেখানে রাজ্যপাল স্বয়ং ক্যাম্পাসে এসেছেন সেখানে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরলে অনেক বৃহৎ স্তরে দাবি পৌঁছে দেওয়া যাবে। এদিকে এদিন সমাবর্তনের অনুষ্ঠান শেষে বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বার্তা দেন, ইউনিয়নের গুরুত্ব তিনি বোঝেন। আশ্বাস দেন, সমস্যার সমাধানের।