নাবালিকাকে যৌন নির্যাতন করে খুনের অভিযোগে উত্তাল তিলজলা, দেহ মিলল প্রতিবেশীর ফ্ল্যাটেই

নাবালিকাকে যৌন নির্যাতন এবং তারপর নৃশংসভাবে খুনের অভিযোগে রবিবার রাত থেকেই উত্তাল তিলজলা। এদিন দিনভর নিখোঁজ থাকার পর এক তালাবন্দি ফ্ল্যাট থেকে হাত, পা, মুখ বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হয় বাচ্চাটির দেহ। সঙ্গে গোটা শরীরে নৃশংস অত্যাচারের চিহ্ন। এই ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় তিলজলা থানা এলাকায়। রবিবার দিনভর ওই একরত্তির খোঁজ না পাওয়ার পর অবেশেষে রাতে নাবালিকার দেহ উদ্ধার হওয়ার পরই মৃতার আত্মীয় ও পড়শিরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পুলিশের বিরুদ্ধে মৃত শিশুর পরিবারের তরফ থেকে তোলা হয় নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ। এদিকে স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবার সকাল আটটা নাগাদ তিলজলা থানা এলাকায় শ্রীধর রায় রোডের এক নাবালিকার আচমকা দেখা মিলছিল না। এও জানা গেছে, নাবালিকা দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। এরপরই তাঁর বাবা সহ আত্মীয়েরা তিলজলা থানার দ্বারস্থ হন। কিন্তু, পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ ঘটনাটিতে কোনও গুরুত্বই দেয়নি। আর সেই কারণেই প্রাণ গিয়েছে নাবালিকার। পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার পরই সক্রিয় হলে হয়তো তাঁকে প্রাণে বাঁচানো সম্ভব হত বলে দাবি নাবালিকার পরিবারের।
এরপরই ক্ষুব্ধ জনতার রোষ আছড়ে পড়ে পুলিশের ওপর। পুলিশ কর্মী ও আধিকারিকদের উদ্দেশে ছোঁড়া হয় ঢিল। তাতে ভাঙে পুলিশের গাড়ির কাচ। একইসঙ্গে থানার গেটে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখায় বাসিন্দারা। পরিস্থিতির অবনতি হতে ডিসি, এসইডি শুভঙ্কর ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে শুরু হয় পাল্টা লাঠিচার্জ। তা শুরু হতেই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় জমায়েত। এর পর ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে গলির ভিতরে ঢুকে বিক্ষোভকারীদের তাড়া করে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা যাতে আর ফিরে না আসে সেটা নিশ্চিত করতে আশেপাশে অলি গলিতে টহলদারি করে পুলিশ। বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে।জমায়েতের উপর লাঠি চার্জ করে পুলিশ। বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয়।
এদিকে সূত্রে এ খবরও মিলছে, এদিন সকালে নিঁখোজ হওয়ার আগে তাঁকে সিসিটিভিতে ওই আবাসনে ঢুকতে দেখা যায়। কিন্তু তারপর থেকে তাঁর খোঁজ মিলছিল না। নাবালিকার বাবা পুলিশের কাছে সমস্ত কিছু জানিয়ে সকালেই ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালানোর কথা বলেছিলেন। এই অভিযোগ পাওয়ার প্রায় ১২ ঘণ্টারও বেশি নিখোঁজ থাকার পর ওই আবাসনে ৩২টি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় পুলিশ ।
এদিকে তিলজলা থানা সূত্রে খবর, শ্রীধর রায় রোডে থাকে এই শিশু কন্য়ার পরিবার। এর উল্টোদিকেই রয়েছে একটি পাঁচতলা বাড়ি। সেখানে আছে ৩২টি ছোট ফ্ল্যাট। এদিন সকাল থেকেই সাত বছরের ওই শিশুকন্যাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ক্রমে পরিবার ও প্রতিবেশীরা সব জায়গায় খুঁজতে শুরু করেন। কোথাও না পেয়ে দুপুর ১২টা নাগাদ থানায় যান। পুলিশ আইন মেনে অপহরণের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে। এরপর ওই অঞ্চলের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করতে গিয়েই দেখা যায়, বাড়ির ভিতর প্রবেশ করছে শিশুকন্যা। পুলিশের তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে, ওই বহুতলের একতলায় রয়েছে একটি গেঞ্জি কারখানা। কারখানাটিতে তল্লাশি চালিয়ে কিছু উদ্ধার হয়নি। যদিও পুলিশ জানতে পারে যে, কারখানার অনেক কর্মী বহুতলের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে থাকেন। এরপরই পুলিশ ওই বহুতলের প্রত্যেকটি ফ্ল্যাটে চিরুনি তল্লাশি চালায়। তিনতলায় অলোক কুমারের ফ্ল্যাটে একটি বস্তা পড়ে থাকতে দেখা যায়। যুবক প্রথমে বলার চেষ্টা করে সেখানে নিজস্ব জিনিসপত্র রয়েছে। কিন্তু বস্তায় হাত দিয়েই নরম কিছু অনুভব করেন পুলিশকর্মীরা। তার উপর বস্তাটি ভিজে দেখেও তাদের সন্দেহ হয়। তড়িঘড়ি সেটি খুলতেই বেরিয়ে পড়ে শিশুকন্যার দেহ। দেখা যায়, নৃশংসভাবে তার মাথা ও কানে সজোরে আঘাত করে খুন করা হয়েছে। দেহ থেকে বেরিয়ে আসছে রক্ত। অলোক কুমারকে টানা জেরার পর শেষ পর্যন্ত সে খুনের কথা স্বীকার করে। এরপরই গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। সূত্রে এ খবরও মিলছে, অভিযুক্ত যুবকের বাড়ি বিহারের সমস্তিপুরে। বছরখানেক আগে এসেছিল সে। শিশুকন্যাকে সে কিছুর লোভ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল বলেই পুলিশ জানতে পেরেছে। ঘটনায় নাবালিকাকে অপহরণ করে খুন ও পকসো ধারায় মামলায় দায়েরের সঙ্গে সঙ্গে থানায় হামলার ঘটনাতেও মামলা দায়ের হয়। এদিকে আলোক কুমারের সঙ্গে শিশুকন্যার পরিবারের কোনও গোলমাল ছিল কি না, সেই তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে। তবে ময়নাতদন্তের পর খুনের কারণ সম্পর্কে আরও স্পষ্ট হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে ধৃত অলোক কুমারকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে এও জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক বছর আগে বিয়ে হয় অলোকের। বারবার সন্তানধারণে চেষ্টা সত্ত্বেও সুফল মেলেনি। তার জেরে পারিবারিক অশান্তি লেগেই থাকত। সন্তানের আশায় তান্ত্রিকের কাছে গিয়েছিল অলোক কুমার। তান্ত্রিক পরামর্শ দেয়, নবরাত্রির মধ্যে বছর সাত-আটেকের কোনও শিশুকে বলি দিলেই সমস্যা মিটবে। সন্তানধারণ করবেন তার স্ত্রী। তান্ত্রিকের কথামতো তিলজলায় শিশুকন্যাকে অপহরণ করে খুন বলেই জেরায় চাঞ্চল্যকর দাবি অভিযুক্তের। অলোকের দাবি আদৌ ঠিক কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে তিলজলা থানার পুলিশ অভিযুক্ত তান্ত্রিক কলকাতা নাকি বিহারের বাসিন্দা সে ব্যাপারেও খোঁজ চালাচ্ছে। পাশাপাশি এটাও দেখা হচ্ছে, অলোকের বয়ান বয়ান আদৌ সত্যি কিনা সে ব্যাপারেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 5 =