কসবার ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় এবার দক্ষিণ কলকাতার বেসরকারি স্কুল সিলভার পয়েন্ট হাই স্কুলের প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপাল এবং দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানাল ছাত্রের পরিবার। পাশাপাশি শানকে ষড়যন্ত্র করে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। কসবা থানার পুলিশের বিরুদ্ধেও তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ তোলা হয়েছে মৃত ছাত্র শেখ শানের পরিবারের তরফে। সঙ্গে মৃত শানের বাবা শেখ পাপ্পু এমনটাও জানিয়েছেন যে, দোষীদের ফাঁসি দাবিতে রাষ্টপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করবেন।
শানের পরিবারের সদস্যদের দাবি, স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের মধ্যেই একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে। তাদের অভিযোগ, স্কুল থেকে প্রথমে দু’রকম কথা বলা হয়েছিল। প্রথমে বলা হয়েছিল মাথা ঘুরে ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছে শান। পরে বলা হয়েছে সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছে। আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে যে, যদি সিঁড়ি বা ছাদ থেকেই পড়ে যেত, তাহলে অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন নেই কেন তা নিয়েও। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, কেবলমাত্রা শানের দাঁত থেকেই রক্ত বের হচ্ছিল। সঙ্গে এ প্রশ্নও উঠেছে যে বাবা মাকে প্রথমেই ফোন না করে স্কুল কেন দূরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল কেন তা নিয়েও। কারণ, স্কুলের কাছেও ছিল হাসপাতাল।
এদিকে সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকালেই মৃত ছাত্রের বাড়িতে পৌঁছেছে কসবা থানার পুলিশ। কথা বলার মতো পরিস্থিতিতেই নেই ছাত্রের মা। তাঁর অভিযোগ, ‘স্কুলে পড়াশোনা কিছুই হয় না। স্কুল কেবল ব্যবসা করছে। অভিযুক্তদের ফাঁসি হোক।’ মৃত ছাত্রের দিদা জানান, ‘আমার বাচ্চা চলে গিয়েছে, এখন আমি আর কী চাই। আমরা শুধু ওদের শাস্তি চাই। আজ আমার বাচ্চা গিয়েছে, কাল অন্যের বাচ্চা যাবে।’ এদিকে পুলিশের হাতে একটি সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ছ’তলার করিডরে ঘোরাফেরা করছিল শান। তার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে স্কুলবাড়ির নীচে মেলে তার রক্তাক্ত দেহ। পরিবারের প্রশ্ন, কান থেকে রক্ত বেরচ্ছিল। শরীরের হাড় ভাঙেনি। আর এখানেই মৃত শানের পরিবারের সদস্যদের প্রশ্ন, তাহলে কী ভাবে উপর থেকে পড়ে মৃত্যু হল তা নিয়েও।
এদিকে সূত্রে এ খবরও মিলছে, স্কুলের অন্যান্য অভিভাবক ও প্রতিবেশিরা জানাচ্ছেন, মৃত ছাত্রের বাবা শেখ পাপ্পু স্কুলের ফিজ় বৃদ্ধির প্রতিবাদ করেছিলেন। কোভিড পরিস্থিতিতে কেন স্কুলের ফিজ বাড়ানো হয়েছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ করেছিলেন। সেই সময়েই স্কুল কর্তৃপক্ষের লোকজন তাঁকে বলেছিলেন তিনি চিহ্নিত হয়ে রইলেন। ছেলে হারিয়ে সোমবার এ কথা বলতে শোনা গিয়েছিল কসবার মৃত ছাত্রের বাবাকে। গোটা ঘটনার জন্য কাঠগড়ায় তোলেন স্কুলকেই। সঙ্গে ছাত্রের মৃত্যুর নেপথ্যে এই বিষয়টিই ফ্যাক্টর হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। সোমবার রাতে পাপ্পু কসবা থানায় এসে দীর্ঘ সময় কথাও বলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁদের আইনজীবী। কসবা থানা থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি এও বলেন, খুন করা হয়েছে তাঁর ছেলেকে।
স্কুলের তরফ থেকে আরও একটি বিষয় উঠে আসছে। সোমবার শানের স্কুলে প্রজেক্ট জমা দেওয়ার দিন ছিল। স্কুলে দুটি প্রজেক্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল। শান একটি প্রজেক্ট জমা দিয়েছিল। ক্লাসের মধ্যে শিক্ষক তাকে কান ধরতে বলেছিলেন। তারপরই এই ঘটনা। এই দুটি ঘটনার মধ্যেও কোনও যোগসূত্র রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পাশাপাশি পুলিশ তদন্তে এটাই জানতে পেরেছে, শানের পরিবারে কিছু সমস্যা ছিল। শানের বাবা-মা ইদানিং আলাদা থাকতেন। শান তার বাবা ও দিদার সঙ্গে থাকত। আর তার মা অন্যত্র। পারিবারিক এই বিষয়ে সে কোনও অবসাদে ভুগছিল কিনা, সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। আপাতত পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে শুরু করেছে কসবা থানার পুলিশ। এদিকে সূত্রের খবর, পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনায় সোমবারই কসবা থানা অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্ত করছে। এদিকে মঙ্গলবার মৃত ছাত্রের ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা।