স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলেও মেলেনি চিকিৎসার কোনও সুবিধা। অবশেষে বাড়ির শেষ সম্বল ঘটি, বাটি গয়না বেচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করিয়েছেন পরিবারের লোকেরা। কিন্তু অর্থের অভাবে মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ চাঁচল থানার চন্দ্রপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমানের (৪৫)। এখন শুধু মৃত্যুর প্রহর গুনছে সাইদুরের পরিবার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চন্দ্রপাড়া অঞ্চলের বাহারাবাদ গ্রামের বাসিন্দা সাইদুর রহমান। কয়েক মাস আগে বাড়তি উপার্জনের জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন সুদূর কেরলে। সেখানে নির্মাণ শ্রমিকের কাজও জুটেছিল। একদিন কাজ শেষে ঘরে ফেরার সময় পথ দুর্ঘটনার শিকার হন। রাস্তা পেরোনোর সময় একটি যাত্রীবাহী বাস সজোরে ধাক্কা মারে সাইদুরকে। গুরুতর জখম অবস্থায় স্থানীয়রা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান প্রায় একমাস চিকিৎসাও চলে। খবর পেয়ে গ্রামে চাঁদা তুলে, নিজের সব গয়না বিক্রি করে কেরলে গিয়ে স্বামীর চিকিৎসা করান স্ত্রী আলিয়ারা বিবি। সাইদুরের দু’বার অস্ত্রোপচারও হয়েছে। এখনও পর্যন্ত চিকিৎসায় খরচ হয়েছে দু’লক্ষেরও বেশি। টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় সপ্তাহ দুয়েক আগে স্বামীকে নিয়ে ট্রেনে করে বাড়ি ফিরেছেন আলিয়ারা। আপাতত বাড়িতেই শয্যাশায়ী তিনি। কোমরের নীচের অংশ এখনও পঙ্গুত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। স্ত্রী ছাড়াও সাইদুরের বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধা মা ও তিন নাবালিকা কন্যাসন্তান। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী শয্যাশায়ী থাকায় তাঁরাও কার্যত পথে বসেছেন। গ্রামবাসী সাহায্য করলে তবেই জ্বলছে উনুন। সাইদুরের স্ত্রী আলিয়ারা বিবি জানান, ‘স্বামীর পায়ু পথ থেকে ডান পায়ের নীচের অংশ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দু’বার অস্ত্রোপচারের পর বাইপাস করে মল-মূত্র ত্যাগ করে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওর আরও একটি অস্ত্রোপচার করতে হবে। কিন্তু তার জন্য তিন লক্ষেরও বেশি টাকা প্রয়োজন। অত টাকা কোথায় পাব? যা ছিল, সব ওর চিকিৎসায় শেষ হয়ে গিয়েছে। হাতে কিছুই নেই। আমাদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রয়েছে। কেরলে সেই কার্ড কাজে আসেনি। এমনকী, মালদার একটি নার্সিংহোমও সেই কার্ডে চিকিৎসা দিতে রাজি হয়নি। সরকার বলছে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে নাকি রাজ্যের যে কোনও জায়গায় বিনা পয়সায় চিকিৎসা পাওয়া যাবে। কিন্তু হচ্ছে কই? মানবিক মুখ্যমন্ত্রী আমাদের পাশে দাঁড়ালে পরিবারটা বেঁচে যাবে। ওর যদি কিছু হয়, তবে আমরা খাব কী?’