এইচআইভি পজিটিভ, জানার পর স্পেশ্যাল এডুকেটরকে ছুটিতে পাঠাল স্কুল কতৃর্পক্ষ

কলকাতা: ডিগ্রি থাকলেই কি শিক্ষিত হওয়া যায়?

এইচআইভি পজিটিভ স্পেশ্যাল এডুকেটরকে স্কুল ছুটিতে পাঠানোয় এই প্রশ্নই সামনে এসেছে।

একদিকে যখন প্রচার চলছে এইডস কোনও ছোঁয়াচে রোগ নয়। হাঁচি-কাশি বা একসঙ্গে থাকলে এই রোগ ছড়ায় না। রোগ ছড়াতে পারে একমাত্র এইচআইভি রোগীর রক্তের সঙ্গে সুস্থ মানুষের রক্তের সংযোগ ঘটলে অথবা যৌন সংসর্গ করলে। শিক্ষক মহলে এই তথ্য অজানা তা কোনওভাবেই হতে পারে না। তা সত্ত্বেও কলকাতার বুকে বেসরকারি স্কুলের এ হেন সিদ্ধান্তে অনেকেই হতবাক।শুরু হয়েছে সমালোচনাও।

জানা গিয়েছে দিন পাঁচেক আগেই ওই স্পেপাশ এডুকেটরের বিয়ে হয়েছে। পাত্রীও এইচআইভি পজিটিভ! চার হাত এক হয় মেদিনীপুরের সুনীতা যাদব ও উত্তর ২৪ পরগনার সৌমিত্র গায়েনের। গত রবিবার মালাবদল করেন ও সাতপাক ঘোরেন এইডস আক্রান্ত পাত্র-পাত্রী।

বিয়ের পর কাজে যোগ। সেখানেই বিপত্তি। স্ত্রী সুনীতা কাজ করেন একটি ক‌্যাফেতে। সেই ‘ক‌্যাফে পজিটিভ’ চালান এইচআইভি পজিটিভ তরুণ-তরুণীরা। কিন্তু নিজের স্কুলে যোগ গিতে গিয়েই মাথায় হাত সৌমিত্রর। অভিযোগ, শুক্রবার স্কুলে যোগ দিতেই কর্তৃপক্ষ ডেকে পাঠায় সৌমিত্রকে। বলা হয়, ‘কেন অসুখ লুকিয়েছ? অবিলম্বে ছুটিতে যাও।’ এমনকী, বলা হয়, আদৌ তাঁকে স্কুলে আর রাখা হবে কি না তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, অসুখ ছড়িয়েছে কিনা জানতে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের রক্ত পরীক্ষা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ঘটনায় ক্ষুব্ধ রাজ্যের স্বাস্থ‌্য অধিকর্তা ডা. সিদ্ধার্থ নিয়োগী। তিনি জানিয়েছেন, বারবার মানুষকে বোঝানো হচ্ছে হাত মেলালে কিম্বা পাশে বসলে এইডস ছড়ায় না। কিন্তু সে কথা যে সবাই বুঝছে না তার প্রমাণ এই ঘটনা। ডা. সিদ্ধার্থ নিয়োগী জানিয়েছেন, পুঁথিগত শিক্ষা থাকলেও কিছু মানুষের সাধারণ জ্ঞানের অভাব রয়েছে। তারই প্রমাণ স্কুলের স্পেশ্যাল এডুকেটরকে ছুটিতে পাঠানো।

বিস্মিত হওয়ার মতো ব‌্যাপার এই স্কুলের কর্ণধার নিজেও একজন ইএনটি বিভাগের চিকিৎসক। তা সত্ত্বেও এমন কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাব যদি স্কুলের কমিটির হয়, তাহলে তারা পড়ুয়াদের বিজ্ঞান সচেতন কীভাবে করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

সৌমিত্রকে স্কুলের তরফ থেকে ফোন করে তিনমাস নির্জনে গিয়ে ছুটি কাটাতে বলা হয়েছে। রাজ্যের বিশিষ্ট চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ‌্যায় জানিয়েছেন, একদিকে রাজ‌্য সরকার যখন এইডস নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে চাইছেন সেখানে বেসরকারি স্কুলের এই সিদ্ধান্ত লজ্জাজনক। পার্লামেন্টের এইচআইভি এইডস অ‌্যাক্ট অনুযায়ী কোনও এইচআইভি পজিটিভ ব‌্যক্তিকে প্রোটেক্টেড পার্সন হিসেবে গণ‌্য করা হবে। তাকে স্থানীয় প্রশাসন সমস্ত রকম নিরাপত্তা দেবে। কোনওভাবে তাকে কর্মক্ষেত্র থেকে বরখাস্ত করা যাবে না। ইতিমধ্যেই সৌমিত্রকে ছুটিতে পাঠানোর ঘটনার প্রতিবাদে শুরু হয়েছে আন্দোলন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − eighteen =