কলকাতা: প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরস্বতী পুজো হওয়া নিয়ে চলছিল টানাপোড়েন। এ নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মত জানতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিটের তরফে তা নিয়ে ট্যুইটারে একটি ভোটও করা হয়। ইউনিয়নের বক্তব্য, ৮৯ শতাংশ ভোট পড়েছে পুজোর পক্ষে। বাকি ১১ শতাংশ ভোট দিয়েছেন না অপশনে।
তবে এবার ধর্মনিরপেক্ষতাকেই থিম করে সরস্বতী পুজো করতে চলেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। ২৬ জানুয়ারি প্রেসিডেন্সির মূল ফটকের বাইরে হবে বাগদেবীর আরাধনা। পুজোর থিম, ‘দেশ সেক্যুলার, প্রেসিডেন্সি সেক্যুলার’। শুধু ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, সর্বধর্ম সমন্বয়ে হবে পুজো। সর্বধর্ম সমন্বয়ের প্রতীক হিসেবে প্রতিমার চারপাশে থাকবে বিভিন্ন ধর্মের প্রতীক। পিছনে থাকবে তেরঙ্গা অর্থাৎ জাতীয় পতাকা। প্রতিমা হবে ডাকের সাজের। প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী তথা মহিলা পুরোহিত পুজো করবেন।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বলছে, ২৬ জানুয়ারি ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। প্রজাতন্ত্র দিবসেই এবার সরস্বতী পুজো পড়েছে। তাই প্রতিমার সঙ্গে থাকবে জাতীয় পতাকা। আবার ধর্মনিরপেক্ষতার অজুহাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই পুজোর অনুমতি দেয়নি কর্তৃপক্ষ। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অভিযোগ, ধর্মনিরপেক্ষতাকে নেতিবাচক অর্থে ব্যবহার করেছে কর্তৃপক্ষ। তাই তারা সেই ‘সেক্যুলার’ বিষয়টিকেই থিমের মাধ্যমে তুলে ধরছেন পুজোয়। বার্তা একটাই, “দেশ ধর্মনিরপেক্ষ, প্রেসিডেন্সিও ধর্মনিরপেক্ষ। তাই পুজো হচ্ছেই।”ধর্মনিরপেক্ষতা, সর্বধর্ম সমন্বয়, জাতীয়তাবাদ ছাড়াও এবার পুজোয় সৌজন্যতার নজির গড়ছে টিএমসিপির প্রেসিডেন্সি ইউনিট। যারা পুজোয় বাধা দিয়েছিলেন, রাজনৈতিকভাবে বিপক্ষ, সেই এসএফআই-আইসির সদস্যদেরও আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। আমন্ত্রিত প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনীরাও। এ প্রসঙ্গে টিএমসিপির প্রেসিডেন্সির ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অরিত্র মণ্ডল বলেন, “আমরা সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আসা না আসা তাঁদের ব্যাপার। তবে অনেকেই আসবেন বলে কথা দিয়েছেন।” পুজো করবেন প্রাক্তনী রাজন্যা হালদার। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সূত্রে খবর, ক্যাম্পাসে এক গন্ডগোলে আক্রান্ত হয়েছিলেন রাজন্যা। সেই মহিলা পুরোহিত তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীর হাতেই পুজো পাবেন বাগদেবী।
কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ডিরোজিওপন্থায় বিশ্বাসী। তাই ক্যাম্পাসে মূর্তিপুজোয় আপত্তি রয়েছে। ২০৬ বছর ধরে ক্যাম্পাসে কোনও পুজো হয়নি। এবার সেই রীতি ভাঙছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। তাঁদের দাবি, শুধু ডিরোজিও নন, প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনীদের তালিকায় রয়েছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়রা। এবার সরস্বতী আরাধনায় সেই সমস্ত বিশিষ্ট প্রাক্তনীদের ছবি থাকবে। তাঁদের প্রতি বিশেষ সম্মান জানানো হবে। বিশিষ্ট অতিথিদের উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মন্ত্রী তাপস রায়, প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতিরা। জানা গিয়েছে, বুধবার বিকেল তিনটেয় প্রতিমা আসবে প্রেসিডেন্সির গেটের বাইরে। ডাকের সাজের প্রতিমা দিচ্ছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য।