শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ৩ দিনের ইডি হেপাজতে তৃণমূলের যুব নেতা কুন্তল ঘনিষ্ঠ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, শনিবার এমনটাই নির্দেশ ব্যাঙ্কশাল আদালতের বিচারকের। এদিকে আদালত সূত্রে খবর, এদিন ইডি-র তরফে শান্তনুকে ১৪ দিনের হেপাজতে চেয়ে আবেদন করে। এদিকে শান্তনুর আইনজীবী তাঁর জামিনের আবেদন জানান। তবে আদালত ১৪ দিনের বদলে ৩ দিনের হেপাজতের নির্দেশ দেয়। এদিন আদালতে দাঁড়িয়ে শান্তনু দাবি করেন, তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে অন্যান্য জেলবন্দিদের নিশানাও করতে দেখা যায় তাঁকে। ফের তাঁকে ১৩ মার্চ ব্যাঙ্কশালের বিশেষ আদালতে পেশ করা হবে বলে আদালত সূত্রে খবর।
শনিবার আদালতে ঢোকার মুখে শান্তনু জানিয়েছিলেন,‘আমি টাকা নিইনি। জেলের মধ্যে যারা আছে তারা ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমি নির্দোষ। যা বলার কোর্টে বলব।’ একইসঙ্গে এও জানান, ‘তাপস মণ্ডলের বয়ানে আমার নাম আসে। এ বছর ২০ জানুয়ারি আমার বাড়িতে তল্লাশি হয়। তল্লাশিতে সহযোগিতা করা হয়েছে। এরপর আমায় ডাকা হল। প্রথমদিন ১২ ঘণ্টা ছিলাম। বিভিন্ন নথি, আইটি ফাইল জমা দিয়েছি। যতবার ডেকেছে, ততবার গিয়ে সাহায্য করেছি।’ এরপর আদালতে দাঁড়িয়েও এই একই দাবি করতে দেখা যায় শান্তনুকে।
এদিকে এদিন আদালতে উঠে আসে শান্তনুর স্ত্রীর নামে থাকা সম্পত্তির খতিয়ানও। ইডির আইনজীবী তা তুলে ধরেন। পাশাপাশি ইডির আইনজীবীর দাবি, ‘ওনার স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা বন্দ্যোপাধ্যায়। আইটি ফাইল যা দেখিয়েছেন, সেখানে নেই। অথচ ওনাদের ধাবা আছে হুগলিতে। ইভান কন্ট্রাক্ট প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি আছে। আর তা আছে শান্তনুর স্ত্রীর নামে। আরও বেনামি সম্পত্তি রয়েছে। আরও জমি নিয়েও তদন্ত চলছে। এই ঘটনায় সামাজিক প্রভাব বিরাট। আমাদের বাচ্চারা যাদের কাছে পড়ছে, সেই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে। সেই কারণেই ১৪ দিনের হেপাজতে চাইছি আমরা।’
এদিকে আদালতে এদিন শান্তনু জানান, ‘৩০০ প্রার্থীর তালিকা পাওয়া গিয়েছে বলে ইডি দাবি করেছে। আমি নাকি টাকা নিয়েছি চাকরি দেওয়ার নামে। আমি কীভাবে চাকরি দিলাম? আমি তো তৃণমূলের যুবর প্রাক্তন নেতা ছিলাম।’ এরপরই ইডি-র তরফ থেকে যে অসহযোগিতার কথা শান্তনুর বিরুদ্ধে তোলা হচ্ছে সে ব্যাপারে জানান, ‘ইডি-র তরফে বলা হচ্ছে আমি নাকি অসহযোগিতা করেছি। অথচ যতবার ডেকেছে, ততবার গিয়ে সাহায্য করেছি।’ এই প্রসঙ্গে শান্তনুর আইনজীবীও জানান, ‘আমরা জানিয়েছিলাম কোথা থেকে টাকা এসেছে। সেই লেনদেন সম্পর্কিত কথা শুনল ইডি। কিন্তু কোনও নথি নিল না। কেন নিল না ইডি? ক্ষমতার অপব্যবহার করছে ইডি। মিথ্যা গল্প সাজাচ্ছে।’
তবে ইডির আইনজীবীর দাবি, ‘গ্রেপ্তারির পর ওনার স্ত্রীকে জানানো হয়েছিল, উনি আসেননি। ফলে আমরা বাধ্য হই গ্রেপ্তার করতে। উনি একজন রাজনৈতিক নেতা হতেই পারেন। সাধারণ যোগ্যরা চাকরি পাননি। বিভিন্ন সরকারি অফিসে যোগাযোগ করা হয় শান্তনুর বাড়ি থেকে পাওয়া ডকুমেন্ট পাওয়ার পর। এই সব তথ্য প্রমাণ পাওয়ার পরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুধু প্রাইমারি নিয়ে এই দুর্নীতি ছিল। কিন্তু পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাটাই দুর্নীতিগ্রস্ত।’ একইসঙ্গে ইডির দাবি, শান্তনুর কথাতেই তাপস মণ্ডল ১৯ কোটি টাকা দিয়েছিলেন কুন্তলকে।