যত দিন যাচ্ছে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তারির তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এবার ইডি-র হাতে গ্রেপ্তার হলেন কুন্তল ঘোষ ঘনিষ্ঠ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। ইডি সূত্রে খবর, শুক্রবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিট নাগাদ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় সিজিও কমপ্লেক্সে আসেন। প্রায় ৭ ঘণ্টা ধরে চলে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ। তার বক্তব্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি থাকায় গ্রেফতার করা হয়। এরপর সন্ধ্যায় তাঁর শারীরিক পরীক্ষার জন্য সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বের করা হবে। ইতিমধ্যেই শান্তনুকে নিয়ে বেশ কিছু তথ্য উঠে আসছে ইডির হাতে।
প্রসঙ্গত, হুগলি জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ এই শান্তনু। শুক্রবার শান্তনুকে ইডির দপ্তরে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। ৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। কুন্তলকে গ্রেপ্তারির প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এই শান্তনুর ওপর কড়া নজর ছিল ইডি-র আধিকারিকদের। ইডি-র তরফে এও দাবি করা হচ্ছে, শান্তনুর কাছেও নিয়োগ দুর্নীতির টাকা যেত বলে খবর রয়েছে তাঁদের কাছে। শুধু তাই নয়, তাঁর হুগলির বলাগড়ের বাড়ি থেকে ইডি-র আধিকারিকেরা উদ্ধার করেছিলেন অ্যাডমিট কার্ডও। এরপর ইডি-র তরফ থেকে শুক্রবার জানানো হয়, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁর কথায় বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। আর এই অসঙ্গতি রয়েছে তাঁর আয়-ব্যয় নিয়েই। শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় কুন্তল ঘোষ ও তাপস মণ্ডল ঘনিষ্ঠ বলেই তদন্তে উঠে এসেছে। এদিন শান্তনুর আয়-ব্যয়ের হিসাবের নথি নিয়ে দেখা করতে বলে ইডি। সঙ্গে কুন্তলের সঙ্গে কার কার টাকার লেনদেন হয়েছে, অভিনয় জগতেও কুন্তলের পরিচিতি কতটা, সেসব জানতে চেয়ে এদিন শান্তনুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে ইডি সূত্রে খবর। আর তারই উত্তর দিতে গিয়ে নানা অসঙ্গতি ধরা পড়ে তাঁর বয়ানে। আর এই অসঙ্গতির জেরেই শেষ পর্যন্ত এই গ্রেপ্তারির সিদ্ধান্ত।
এখানে বলে রাখা শ্রেয়, কুন্তল যেমন হুগলির তৃণমূল যুবনেতা ঠিক তেমনই বছর ৪০-এর শান্তনুও এই জেলারই তৃণমূলের যুবনেতা। সঙ্গে হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষের দায়িত্বও দেওয়া রয়েছে তাঁর কাঁধে। তবে এই যুবনেতা প্রথমে হুগলির জিরাট কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দায়িত্ব পান। এরপর ব্লকের পাশাপাশি জেলাতেও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা হয়ে ওঠেন। এরপর যুব সংগঠনের জেলা সভাপতিরও দায়িত্ব সামলেছিলেন কিছুদিন। এরপর রাজ্য যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতির দায়িত্বও পান। হুগলি জেলার পাশাপাশি পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় যুব তৃণমূলের দায়িত্ব পান তিনি।
এদিকে কুন্তল গ্রেপ্তার হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর বলাগড়ের বাড়িতেও যান ইডি-র আধিকারিকেরা। গত জানুয়ারির ২০ তারিখে বলাগড়ের বাড়িতে ইডি-র তরফ থেকে যে অভিযান চালানো হয় তখনই মেলে বেশ কিছু অ্যাডমিট কার্ড ও ৩০০ চাকরিপ্রার্থীর নথি। এরপর বার ছয়েক ইডি-র আধিকারিকেরা বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে নানা তথ্য জানতে তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকেও পাঠান। এদিকে কেন্দ্রীয় তদন্তাকারী আধিকারিকেরা কুন্তল এবং তাপসকে জেরা করে জানতে পেরেছেন যে, তাপস মণ্ডলের সঙ্গে নাকি শান্তনুর পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন কুন্তল ঘোষই। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে তাপস-শান্তনু-কুন্তলের একাধিকবার দীর্ঘ বৈঠকও হয় বলেই ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, তাপসের বয়ানে কুন্তলের ‘দাদা’ শান্তনু। শুধু তাই নয়, ইডি-র তরফ থেকে শান্তনু সম্পর্কে এও জানানো হয়েছে যে, গত কয়েক বছরে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তির পরিমাণ যে ভাবে বেড়েছে তা নজরে পড়ার মতোই। সবথেকে বেশি নজরে আসছে শান্তনুর ব্যাঙ্ক ব্যালান্স।