মহেশ্বর চক্রবর্তী: প্রত্যেক বছরের মতোই এই বছরও আরামবাগ নবপল্লির হালদার বাড়িতে ধুমধামের সঙ্গে আয়োজন করা হয় বাসন্তী পুজোর। ঐতিহ্য ও পরম্পরা ধরে রেখে হালদার বাড়িতে কয়েকশো বছর ধরে দেবীর আরাধনায় হয়ে আসছে। পারিবারিক পুজো হলেও এই পুজোয় এলাকাবাসীদের অংশগ্রহণ থাকে চোখে পড়ার মতো। আত্মীয় ও পড়শিদের নিয়ে জমে উঠেছে এবারের পুজো। ষষ্ঠীর দিন থেকেই পুজোর বহু মানুষের সমাগম হয় দেবীর পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার জন্য। নিয়ম মেনেই ষষ্ঠীর অধিবাস থেকেই শুরু হয়েছে। এই পুজোর বিশেষত্ব হল এখানে একচালা ঠাকুরের পুজো করা হয়। পশুবলির বদলে খড়ের হাঁড়ি কাঠে সন্দেশ বলি হয় আরামবাগের হালদার বাড়ির শতাধী প্রাচীন বাসন্তী পুজোয়।
উল্লেখ্য,পুরাণ মতে রাজা সুরথ করেন বাসন্তী পুজো এবং রাবণ বধের আগে রামচন্দ্র করেন শারদীয়া দুর্গাপুজো। সেনযুগে যে বাসন্তী দুর্গাপুজোর সূচনা হয়েছিল, সেখানে রামের জন্মতিথিকে এই পুজোর নবমীর সঙ্গে যুক্ত করা হয়, যা রামনবমী নামে পরিচিত। সেনযুগ ও পাল আমলের বৌদ্ধ আধিপত্যের স্থানে বাংলায় হিন্দু ব্রাহ্মণ্য ঐতিহ্যকে প্রতিষ্ঠিত করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তার ফলস্বরূপ উত্তর ভারতের বৈদিক সংßৃñতির সঙ্গে মাতৃতান্ত্রিক আরাধনাকে সংযুক্ত করার প্রয়োজন দেখা দেয়। অপরদিকে, সাহিত্যিক রাধারমণ রায় লিখেছেন, সেনযুগে দুর্গাপুজো পরিণত হয় রাজ- রাজা আর দস্যু-তস্করের পুজোয়। রাজ-রাজরা এই পুজো করতেন বছরের শ্রেষ্ঠ ঋতু বসন্তকালে। যখন প্রকৃতি ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে উঠত, তখন গরিব প্রজাদের কাছ থেকে খাজনার নামে ছিনিয়ে আনা রক্তরাঙা টাকায় রাজা-জমিদাররা দুর্গাপুজো করতেন জৌলুস-জাহিরের জন্য। তখন এই পুজোর নাম ছিল বাসন্তী।
যাইহোক আরামবাগের হালদার বাড়ির নতুন সদস্যা নববধূ ঈপ্সিতা হালদার জানিয়েছেন, আমি বিয়ের আগে থেকেই এই পুজোর কথা শুনেছিলাম। আমার বাড়ির পুজোতে অংশ নিতে পেরে ভালো লাগছে। বাড়ির পুজোয় আমি একদমই নতুন। দুই বছর ধরে এই পুজোয় সামিল হয়েছি। খুবই ভালো লাগছে এই পুজো উদ্যোক্তাদের একজন হতে পেরে। অপরদিকে ওই পরিবারের সদস্য দিলীপ কুমার হালদার বলেন, চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের বাসন্তী পুজো আদি দুর্গাপুজো। সেই ঐতিহ্য মেনে বংশ পরম্পরায় সেই পুজো হয়ে আসছে। বাড়ির বড় গৃহবধূ অর্পিতা হালদার বলেন, বাড়ির গৃহবধূ হিসাবে প্রত্যেকদিনই পুজোর কাজে অংশ নিতে হচ্ছে। সকলের সঙ্গে হাতে হাত লাগিয়ে পুজোর কাজ করতে ভালো লাগছে। সবমিলিয়ে আরামবাগের হালদার বাডিীর বাসন্তী পুজোয় প্রাচীন ঐতিহ্যের পরম্পরা বহমান বলা যায়।