বুবুন মুখোপাধ্যায়
গোরু পাচার মামলায় ধৃত তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের ৭ দিনের সিবিআই হেপাজতের নির্দেশ দিল আসানসোল সিবিআই আদালত। শুক্রবার বিকেলে এই মামলার দু’পক্ষের আইনজীবীদের সওয়াল-জবাব শেষে সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী তার জামিন নাকচ করে এই নির্দেশ দেন। পরবর্তী শুনানি দিন আগামী ১৭ জুন। সিবিআই এদিন সায়গলকে ১৪ দিনের হেপাজত চেয়ে আবেদন করেছিল। তবে, এদিনের শুনানিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল এই মামলার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আইও বা তদন্তকারী অফিসারকে শোকজ করা। আইন মেনে সিআরপিসির নির্দিষ্ট ধারা ৪১এ-তে নোটিস না পাঠিয়ে সায়গলকে গ্রেফতার করায় বিচারক মামলার আইও-কে লিখিত ভাবে কারণ দর্শানোর জন্য শোকজ করেন। তাকে আগামী ১৭ জুন সেই শোকজের জবাব দিতে বিচারক নির্দেশ দেন। আসানসোল সিবিআই বিশেষ আদালতে এদিন সায়গল-কে পেশ করাকে নিয়ে নানা ঘটনায় সরগরম রইল আদালত চত্বর। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে দু’টি গাড়িতে সায়গলকে নিয়ে এসে, সরাসরি সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী এজলাসে নিয়ে যাওয়া হয়। তার আগেই আসানসোল আদালতে চলে আসেন সায়গলের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা ও সঞ্জীব কুমার দাঁ। সায়গল হোসেনকে শুক্রবার দুপুরে একটা নাগাদ আসানসোল সিবিআই আদালতে তোলা হলেও শুনানি শুরু হতে দেরি হয়। তার কারণ, আসানসোল আদালতে বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে আদালতে। এরফলে মামলার শুনানি হতে জটিলতা তৈরি হয়। যদিও সেই সময় সিবিআই ও সায়গলের আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন এজলাসে। আসানসোল বার অ্যাসোসিয়েশনের ঘোষিত কর্মবিরতি চলায় শুনানি পর্ব শুরু হতে দেরি হয়। শেষ পর্যন্ত বিকেল তিনটের সময় বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজেশ ওরফে বান্টি তিওয়ারির নেতৃত্বে বার অ্যাসোসিয়েশনের একটি দল শুনানি করতে সম্মতি দেন। এরপর শুনানি শুরু হতেই, সায়গলের আইনজীবীরা তার গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা এজলাসে বলেন, এই গ্রেপ্তার বেআইনি। এক্ষেত্রে একজনের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। ১৬০ নং ধারায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিস দিয়ে ডেকে পাঠিয়ে মক্কেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যা করা যায় না। তিনি সুপ্রিম কোর্টের আরনিশ কুমার মামলার উদাহরণ দিয়ে বলেন, কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে, তাকে সিআরপিসির ৪১এ নং ধারায় নোটিস দিতে হবে। সেটা বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এর পাশাপাশি অ্যারেস্ট মেমো দেওয়ার ক্ষেত্রেও আইন মানা হয়নি। এরপর সওয়াল করতে গিয়ে সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার, নানান ভাবে বলার চেষ্টা করেন যে, আইন মেনে সবকিছু করা হয়েছে। কিন্তু তাকে বিচারকের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। মামলার আইও নিজেও বিচারকের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত এক ঘন্টারও বেশি সময় সওয়াল-জবাব শেষে বিচারক সায়গলের জামিন নাকচ করে দেন। উল্লেখ্য, সায়গেল হোসেনের বিরুদ্ধে আইপিসি ১২০বি অর্থাৎ অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও সরকারি কর্মীর দুর্নীতির জন্য পিসি অর্থাৎ প্রিভেনসেন অফ কোরাপসেন ৭/১০/১১ ধারা দেওয়া হয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে। কয়েকদিন আগে মুর্শিদাবাদের ডোমকলে সায়গলের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তদন্তকারীদের মতে, সায়গলের কাছে গরু পাচার মামলার অনেক তথ্য রয়েছে। সিবিআই তাকে একাধিকবার নিজামের প্যালেসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তদন্তকারীদের মতে, সায়গলের বক্তব্যে বেশকিছু অসঙ্গতি রয়েছে। একারণেই তাকে বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রসঙ্গত, গোরু পাচার মামলায় অনুব্রতর ঘনিষ্ঠদের একের পর এক ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। মামলার প্রধান অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র বর্তমানে পলাতক। এই মামলার অন্যতম এনামুল হক ও বিএসএফের কম্যান্ডার সতীশ কুমারকে সিবিআই গ্রেপ্তার করলেও তারা এই মুহূর্তে শর্তসাপেক্ষে জামিনে রয়েছে। একই সঙ্গে বিনয়ের ভাই বিকাশ মিশ্রকেও গ্রেপ্তার করেছিলো সিবিআই। বিকাশ দু’দিন আগেই আসানসোলের সিবিআই আদালত থেকে গোরু পাচার মামলায় জামিন পেয়েছে।