বুবুন মুখোপাধ্যায়, আসানসোল: শুক্রবার আবারও জামিন নাকচ হল সায়গল হোসেনের (Sehgal Hossain)। মোট দুগ্দফার শুনানির শেষে আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী তার জামিন নাকচ করে ফের ১৪ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দেন। আগামী ১৮ অগস্ট পুনরায় আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে তোলা হবে বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে।
এদিন পর্যন্ত তার হেপাজতে থাকার মেয়াদ হয় ৫৭ দিন। আগামী ৮ অগস্ট সোমবার সেই মেয়াদ বেড়ে হবে ৬০ দিন। সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের একটি শুনানির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সায়গলের আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা তার জামিন পাওয়ার কথা বলেন। তখন বিচারক নতুন করে নির্দেশ দিয়ে বলেন, আগামী সোমবার এই মামলার শুনানি হবে। এদিকে আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬০ দিনের মাথায় বা তার আগে সিবিআই যদি চার্জশিট জমা দিয়ে দেয়, তাহলে সায়গলের জামিন পাওয়া মুশকিল। উল্লেখ্য, এই মামলায় আগেই বিচারক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে কেস ডায়েরি চেয়ে পাঠিয়েছিলেন। আরও জানা গিয়েছে, সায়গলের কাছ থেকে সিবিআই একটি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছিল। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি ছিল, তাতে প্রভাবশালীদের সঙ্গে এমন কিছু কথোপকথন রয়েছে, যা এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ। তখন সায়গলের আইনজীবী তা বাজেয়াপ্ত করার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন তার ফরেন্সিক পরীক্ষা করানোর জন্য। জানা গিয়েছে, আগামী সোমবার এই আবেদনেরও শুনানি হবে। এর আগে সায়গলকে গত ২২ জুলাই আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে তোলা হয়েছিল।
সেদিনের মতো এদিনও এই মামলায় ৩২ দিনের মাথায় গ্রেপ্তার হয়ে জামিন পাওয়া বিএসএফের কমান্ডেন্ট সতীশ কুমারের প্রসঙ্গ টেনে আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা সায়গলের জামিনের আবেদন করেন। তিনি সওয়াল করে বলেন, সতীশ কুমার কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী হওয়ায় তাকে জামিন দেওয়া হল। আর সায়গল রাজ্য সরকারি কর্মী বলে তাকে জামিন পেতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার তার বিরোধিতা করে পাল্টা জবাবে বলেন, তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে, এই সময় জামিন দেওয়া উচিত নয়। এছাড়াও তিনি বলেন, সম্প্রতি বীরভূমের বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালানো হয়। তাতে সায়গলের কিছু লিঙ্ক বা যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে এবং আরও তথ্য পাওয়া যাবে। যা আদালতে দেওয়া হচ্ছে ও হবে। তখন সায়গলের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলেন, গত ১৪ দিনে এই মামলায় নতুন করে কোনও কিছু তদন্তে পাওয়া যায়নি। এইভাবে বারবার জামিন আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এরপর বিচারক সায়গলের জামিনের আবেদন খারিজ করেন ও পুনরায় ১৪ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দেন।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে খবর, সায়গলের সঙ্গে সিবিআই গোরু পাচারের পাশাপাশি পেঁয়াজ, বালি ও পাথরের ব্যবসার যোগাযোগের একটা সূত্র পেয়েছে। এছাড়াও অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠদের নামে আরও ১৪ টি সম্পত্তির নথি সিবিআই পেয়েছে। এই সবকিছুই সিবিআই আদালতে জমা দিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এই গোরু পাচার মামলায় বীরভূম জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠদের একের পর এক ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। আগামী সোমবার যেদিন আসানসোলের সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে সায়গলের জামিনের শুনানি হবে, সেদিন এই মামলার জেরার জন্য অনুব্রত মণ্ডলকে কলকাতায় ডেকে পাঠিয়েছে সিবিআই।
অন্যদিকে, এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র বর্তমানে পলাতক। মামলার অন্যতম এনামুল হক ও বিএসএফের কমান্ডেন্ট সতীশ কুমারকে সিবিআই গ্রেপ্তার করলেও তারা এই মুহূর্তে শর্তসাপেক্ষে জামিনে রয়েছে। একই সঙ্গে বিনয়ের ভাই বিকাশ মিশ্রকেও গ্রেপ্তার করেছিল সিবিআই। বিকাশ কিছুদিন আগে আসানসোলের সিবিআই আদালত থেকে গোরু পাচার মামলায় জামিন পেয়েছে। কয়লার মামলার শুনানি চলছে। বর্তমানে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে রয়েছে বিকাশ মিশ্র। অন্যদিকে সিবিআই হেপাজতের পর থেকেই সায়গল হোসেন আসানসোল জেল বা বিশেষ সংশোধনাগারে রয়েছে। এদিন বিচারকের নির্দেশের পরে বিকেলে তাকে আসানসোল আদালত থেকে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়।