মন্দির থেকে প্রায় দেড়শো মিটার দূরে রয়েছে কালিন্দী নদী। অমাবস্যার রাতে যখন শুরু হয় পাঁঠা বলি, সেই বলির রক্ত জলের মতো গড়িয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত কালিন্দী নদীতে না মিশছে ততক্ষণ পর্যন্ত একনাগারে এক ডজন সেবাইত বলি দিয়ে যান। রাত থেকে শুরু হলেও সেই পাঁঠা বলি ভোর গড়িয়ে সকাল পর্যন্ত চলতে থাকে। এছাড়াও পায়রা, চালকুমড়ো বলিও দেওয়া হয়।
প্রাণ ভরে দেবী কালী মাতার কাছে মানত করলে কেউ আজ পর্যন্ত বিমুখ হয়ে যাননি, এমনই দাবি গ্রামবাসীদের। মালদার রতুয়া ২ ব্লকের আড়াইডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো গোবরজনা কালীমাতার পুজো আজও প্রাচীন নিষ্ঠার সঙ্গে হয়ে আসছে। স্থানীয় প্রবীণদের কথায়, গোবরজনা কালীবাড়িতে অমাবস্যায় কালীপুজোর রাতে সিদ্ধায়ু পুরুষ ও তন্ত্র সাধকের আগমন ঘটে। এই মন্দির সংলগ্ন এলাকার পাশেই রয়েছে শ্মশান। সেখানেই নাকি অনেকেই কালীপুজোর রাতে সিদ্ধায় পুরুষের দর্শন পেয়েছেন।
রতুয়া ২ ব্লকের গোবরজনা কালী মন্দির কমিটির সঙ্গে ইতিমধ্যে পুলিশ ও প্রশাসন এক প্রস্তর বৈঠক করেছেন। কারণ, কালীপুজোর দিন কয়েক লক্ষ মানুষের ভিড় হয়। গোবরজনা কালীবাড়িতে পরিবারের সুখ, শান্তি, সন্তান লাভের জন্যই ভক্তেরা ছুটে আসেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। অধিকাংশ ভক্তদেরই মনস্কামনা পূর্ণ হলেই পাঁঠা, কুমড়ো, পায়রাবলি দিয়ে থাকেন। যা কালী পুজোর দিন রাতভর চলে।
গোবরজনা কালীবাড়ির সেবাইত শ্যামাপদ চৌধুরী জানিয়েছেন, এই গোবরজনা কালী পুজো করে আসছেন চৌধুরী পরিবার। পুরনো রীতি মেনেই কালীপুজোর দিন কাঁধে করে নিয়ে মন্দিরের নিয়ে আসেন মাকে। তারপর পুজোপাঠের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় বলি।
স্থানীয় প্রবীণদের কথায়, গোবরজনা শ্মশানে একটা সময় নাকি সিদ্ধপুরুষ মাধব সন্ন্যাসী (যা ঘণ্টি বাবা) নামে পরিচিত, মহাদেব এবং কালীমায়ের দর্শন পেয়েছিলেন। এই কালীমন্দিরের পাশে একটি প্রতিষ্ঠিত শিব মন্দির আছে। ঘণ্টি বাবা দেহত্যাগ করার পরে তার নামেই মন্দির এবং একটি মূর্তি ও তৈরি করেছেন ভক্তেরা। বহু বছর আগে সিদ্ধায়ু পুরুষ ঘণ্টিবাবাই নাকি গোবরজনা কালী বাড়ির নামকরণ করেছিলেন।
এদিকে এদিন গোবরজনা কালী বাড়ির পুজো নিয়ে মন্দির পরিদর্শন করেন রতুয়া ২ ব্লকের জয়েন ভিডিও শেখর শেরপা, পুখুরিয়া থানার ওসি গৌতম চৌধুরী, স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি মন্দির কমিটি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সুষ্ঠুভাবে পুজো পরিচালনা করার ক্ষেত্রেও এদিন পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি বৈঠক করা হয়।