সুজিতকে সিবিআইয়ের তলব রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে মানতে রাজি নন সব্যসাচী

সুজিতের সিবিআইয়ের তলবকে যখন ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ হিসেবে তুলে ধরতে সক্রিয় তৃণমূলের একাংশ, তখন খানিক উলটো রাস্তায় হাঁটলেন রাজারহাট-নিউটাউনের প্রাক্তন বিধায়ক।

প্রসঙ্গত, পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায় রাজ্যের প্রায় ১৪টি পুরসভা অভিযান চালিয়ে নথি বাজেয়াপ্ত করেছেন সিবিআই তদন্তকারী আধিকারিকরা। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত অয়ন শীলের অফিস থেকে একাধিক পুরসভায় নিয়োগে বেনিয়মের নথি উদ্ধারও হয়েছে। এরই সূত্র ধরে কয়েকদিন আগেই সিবিআইয়ের তরফ থেকে জানানো হয়, পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুকে তলব করা হয়েছে তাদের তরফ থেকে। এই সমনে আগামী ৩১ অগাস্ট নিজাম প্যালেসের ১৫ তলায় অ্যান্টি করাপশন ব্যুরোর দফতরে হাজির হতে বলা হয়েছে। এবার সিবিআইয়ের তরফ থেকে পাঠানো সমন নিয়ে মুখ খুলতে দেখা গেল বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান ও তৃণমূলে সুজিতের ‘সতীর্থ’ সব্যসাচী দত্তকে।

বিধাননগর এলাকার রাজনীতিতে সুজিত-সব্যসাচীর ‘শীতল’ সম্পর্ক নিয়ে কানাঘুষো অনেক কথাই শোনা যায়। এমনকী একাধিকবার তৃণমূলের এই দুই নেতাকে প্রকাশ্যে সংঘাতে জড়াতে দেখা গিয়েছে। বিধাননগরের রাজনীতিতে সুজিত-সব্যসাচী গোষ্ঠীর লড়াই সুবিদিত। একাধিবার দুই নেতার অনুগামীরা সংঘর্ষের জড়িয়েছেন। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে তৎকালীন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন সব্যসাচী। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিধাননগরে সুজিত-সব্যসাচী লড়াই দেখেছিল বঙ্গবাসী। তখন দুর্নীতি নিয়ে সুজিতের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক দাবি করে বিজেপি প্রার্থী সব্যসাচী। ভোটের ফলে সব্যসাচীকে টেক্কা দিয়ে জয়ী হন সুজিত। রাজ্যে তৃণমূলের ক্যামব্যাকের পর ‘ঘর ওয়াপসি’ হয় সব্যসাচীর। ২০২২ বিধাননগর পুরসভা নির্বাচনের পর প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচীকে চেয়ারম্যান পদে বসান খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলে ফিরে এলেও সুজিত-সব্যসাচী সম্পর্কে ‘শৈত্য’ কাটেনি।

এদিকে সুজিতের সিবিআই তলব নিয়ে সব্যসাচী জানান, ‘এটা পুরোপুরি বিচারাধীন বিষয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে এই তদন্ত চলছে। সত্য উদঘাটনের জন্য সিবিআই যাঁকে চাইবে ডাকতে পারে। আমরা চাই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সত্য উদঘাটিত হোক।’ অর্থাৎ সুজিতকে পাঠানো সিবিআইয়ের এই সমনকে এখনই ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ হিসেবে মানতে রাজি নন সব্যসাচী। এই প্রসঙ্গে বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান এও জানান, ‘এটা বিচারাধীন বিষয় আপনারা জানেন। সেই কারণে আমি অন্তত এই ধরনের কথা বলব না।’

এদিকে সিবিআই তলবের কথা সংবাদ মাধ্যমে চাউর হতেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সুজিত জানিয়েছিলেন, ‘আমি এখনও হাতে কোনও চিঠি পাইনি। সংবাদমাধ্যমে দেখলাম। আমার কাছে কিছু জানতে চাওয়া হলে অবশ্যই উত্তর দেব।’ উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে দক্ষিণ দমদম পুরসভার নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সুজিতকে তলব করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর। সেই সময় পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two + thirteen =