আসানসোল: রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কম্বল বিতরণে অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হয়ে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির চাপানউতোর অব্যাহত। ট্রাম্পকার্ড হাতছাড়া করতে চাইছে না কোনও রাজনৈতিক দলই। এই ঘটনায় পদ্ম শিবিরকে কার্যত চেপে ধরতে সর্বশক্তি দিয়ে নেমেছে ঘাসফুল শিবির।
বুধবার মর্মান্তিক ঘটনার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তিনজনের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত নিয়ে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ছিল কার্যত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাজ্য পুলিশের বিশাল বাহিনীর পাশাপাশি নামানো হয়েছিল কমব্যাট ফোর্স। ছিলেন আসানসোল দুর্গাপুর কমিশনারেটের এসিপি, ইন্সপেক্টর, সাব ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার একাধিক অফিসার। তারই মাঝে মর্গের সামনে সাড়ে এগারোটা নাগাদ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তখন মর্গের সামনে ছিলেন আসানসোল পুরনিগমের মেয়র বিধান উপাধ্যায়, দুই ডেপুটি অভিজিৎ ঘটক ও ওয়াসিমুল হক, পান্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, পুরনিগমের একাধিক মেয়র পারিষদ, কাউন্সিলর সহ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা। ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের কয়েকশো কর্মী ও মৃত তিনজনের পরিবারের সদস্য এবং এলাকার বাসিন্দারা। অন্যদিকে ছিলেন বিজেপির জেলা সভাপতি দিলীপ দে, রাজ্য কমিটির সদস্য কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়, মহিলা নেত্রী আশা শর্মা সহ বেশ কিছু বিজেপির নেতা ও কর্মীরা। সেই সময় তৃণমূল কর্মীরা কালো ব্যাজ পরে বিজেপি বিরোধিতায় স্লোগান দিতে শুরু করেন। পাল্টা অবশ্য বিজেপির নেতা ও কর্মীরা কোনও স্লোগান দেননি। সবমিলিয়ে মর্গের সামনেকার পরিস্থিতি সরগরম হয়ে উঠে।
দেড়টা নাগাদ ময়নাতদন্ত পর্ব শেষ হওয়ার পর একে একে তিনজনের মৃতদেহ তিনটি আলাদা শববাহী গাড়িতে তোলা হয়। পরে পুলিশ পাহারায় সেই তিনটি গাড়ি আসানসোলের রেলপারের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সঙ্গে যান মেয়র, ডেপুটি মেয়র সহ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও কর্মীরা। তিনজনের মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছতেই পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা বুঝে উঠতে পারছেন না, যে, কি করে এই ঘটনা ঘটল। ঘটনার আকস্মিকতায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। এত কিছু হলেও, বিজেপি নেতা ও কর্মীরা মৃতদেহর কাছাকাছি যেতেও পারেননি। এলাকাতেও কেউ ছিলেন না। দূর থেকেই তারা সবকিছু দেখেন।
প্রসঙ্গত, বুধবার বিকেলে আসানসোল উত্তর থানার রেলপারের রামকৃষ্ণ ডাঙালে কম্বল বিতরণের এক অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির স্ত্রী চৈতালি তিওয়ারি। বিকেল চারটে নাগাদ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হাজির হন। শুভেন্দু বক্তব্য রেখে ও একজনকে কম্বল বিতরণ করে চলে যান। এরপরেই শুরু হয় পাঁচটি কাউন্টার থেকে কম্বল বিতরণ ও বিশৃঙ্খলা। কম্বল নিতে হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে তিন জনের। মৃতের পরিবারের সদস্যরা উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তিন জনের পরিবারের তরফেই ক্ষতিপূরণেরও দাবি করা হয়।