অস্ট্রেলিয়া সফরেই রোহিতের শেষ অধ্যায় ? সম্মানজনক বিদায়ের পথে হিটম্যান

মুম্বইয়ের ক্রিকেটার মানেই এক সময় ভারতীয় দলে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি ছিল। ঘরোয়া ক্রিকেট, আইপিএল বা আন্তর্জাতিক মঞ্চ—সর্বত্র তাঁদের সাফল্যের নজির ছিল স্পষ্ট। তবে আজকের দিনে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গিয়েছে। শ্রেয়স আইয়ারকে যেমন দেখা গেল ঘরোয়া ও আইপিএল মঞ্চে ধারাবাহিক পারফর্ম করেও জাতীয় দলে দীর্ঘস্থায়ী জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হতে, তেমনই এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম ভরসা রোহিত শর্মার ক্ষেত্রে।

‘হিটম্যান’ নামে পরিচিত রোহিত গত কয়েক বছরে দেশের হয়ে অসংখ্য স্মরণীয় ইনিংস খেলেছেন। তবে সময়ের সঙ্গে তাঁর ফর্মে ধস নামে, বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে। ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণে শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাধ্য হয়ে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে হয়। শোনা যায়, নির্বাচকরা তাঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন—নিজে না সরলে বাদ পড়তে হবে। ফলে রোহিতের টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষটা হয়েছিল তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে।

টি-টোয়েন্টিতেও বিশ্বকাপ জেতার পর তিনি অবসর ঘোষণা করেন। বর্তমানে তিনি শুধুমাত্র ওয়ানডে ফরম্যাটে খেলেন। কিন্তু এখানেও ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। ক্রিকেটমহলের ধারণা, ভারতীয় দলে দীর্ঘদিন আর তাঁর জায়গা ধরে রাখা সম্ভব হবে না। কারণ, নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের তুলে আনতে নির্বাচক এবং কোচিং স্টাফরা মরিয়া। এমনকি শোনা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই ‘প্রোজেক্ট রোহিত’ শুরু হয়ে গিয়েছে, যেখানে তাঁর সম্ভাব্য বিদায়ের পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।

আগামী অক্টোবর মাসে অস্ট্রেলিয়া সফরে যাবে ভারত। সেখানে তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ রয়েছে। জানা যাচ্ছে, এই সিরিজই সম্ভবত রোহিতের অধিনায়ক হিসেবে শেষ সুযোগ। তাঁকে সম্মানজনক বিদায়ের রাস্তা দেখানো হবে। যদি তিনি নিজে অবসর নেন, তবে সেটাই হবে সুন্দর সমাপ্তি। কিন্তু না নিলে নির্বাচকরা শুভমান গিলকে নেতৃত্বভার দিয়ে নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারেন। অর্থাৎ, টেস্ট থেকে যে সম্মানজনক বিদায় তিনি পাননি, ওয়ানডেতে অন্তত সেই সুযোগ হয়তো মিলতে চলেছে।

রোহিতের ভবিষ্যৎ নিয়ে যতই অনিশ্চয়তা থাকুক, বিরাট কোহলির ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন উঠছে—তিনি ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলবেন কি না। তবে বিরাটের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে নির্বাচকদের সিদ্ধান্তের উপর। অন্যদিকে রোহিত সম্পর্কে নাকি কোচ গৌতম গম্ভীরের আগ্রহ খুবই কম। গম্ভীর এখন জাতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে কাজ করছেন, ফলে তাঁর অবস্থানই অনেক কিছু নির্ধারণ করছে।

সর্বোপরি, ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে রোহিত শর্মার অবদান অস্বীকার করা যায় না। তিনিই প্রথম ব্যাটসম্যান যিনি তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন ওয়ানডে ক্রিকেটে, তিনি অধিনায়ক হিসেবে দেশকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন। কিন্তু সময় সবকিছুকে ছাড়িয়ে যায়। নতুন প্রজন্মকে জায়গা দিতে গিয়ে কিংবদন্তিদের বিদায় নিতে হয়। রোহিতের ক্ষেত্রেও সেই সময় ঘনিয়ে এসেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে ভক্তদের আশা, যেভাবে তিনি ভারতীয় ক্রিকেটকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে গিয়েছেন, তেমনই সম্মানের সঙ্গেই তিনি জাতীয় দলের মঞ্চ থেকে বিদায় নেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 + fourteen =