ইউটিউবার রোদ্দুর রায়ের ‘গানের গুঁতো’, জেরবার অন্য বন্দিরা

গান জুড়েছেন গ্রীষ্মকালে ভীষ্মলোচন শর্মা-
আওয়াজখানা দিচ্ছে হানা দিল্লি থেকে বর্মা !
গাইছে ছেড়ে প্রাণের মায়া, গাইছে তেড়ে প্রাণপণ,
ছুট্‌‌ছে লোকে চারদিকেতে ঘুরছে মাথা ভন্‌ ভন্‌ ।

মনে পড়েছে সুকুমার রায়ের গানের গুঁতো কবিতাটির কথা? সেখানে গান জুড়েছিলেন ভীষ্মলোচন শর্মা। আর গারদে গান জুড়েছেন ইউটিউবার রোদ্দুর রায়। অশ্লীল শব্দ যোগ মাঝরাতে বন্দিদের জাগিয়ে তারস্বরে তালি বাজিয়ে গান গাইছেন তিনি। আর সেই গানের গুঁতোর চোটে কান-মাথা খারাপ হতে বসেছে কলকাতার ‘ত্রাস’ সোনা পাপ্পুর। শুধু গানেই থেমে না থেকে রাত-দুপুরে রোদ্দুর রায়ের ‘মোক্ষ’ বাণী শুনে প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার জোগাড় অন্য বন্দিদেরও।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়কে নিয়ে অশ্লীল মন্তব্যের জেরে গ্রেপ্তার হয়েছেন ইউটিউবার রোদ্দুর রায়। ডিগ্রির হিসেবে যথেষ্টই শিক্ষিত তিনি। তাঁর ফ্যান ফলোয়ারও নেহাত কম নয়। আর এ হেন রোদ্দুর রায়ের কীর্তি কলাপ শুনে নাকি প্রথমটায় একচোট হেসেছিলেন সম্প্রতি ধরা পড়া সোনা পাপ্পু।

পুলিশ সূত্রে খবর, রোদ্দুর রায়কে যখন গোয়া থেকে গ্রেপ্তার করে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়,  একই সময় গ্রেপ্তার হয় দক্ষিণ ও পূর্ব কলকাতার ‘ত্রাস’ বলে পরিচিত সোনা পাপ্পু। ধরা পড়ে তার আরও পাঁচ সঙ্গী। গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডাদমন শাখায় জেরার জন্য আনা হয় রোদ্দুর রায় ও কসবায় তোলাবাজি ও বিভিন্ন গোলমালে অভিযুক্ত সোনা পাপ্পু ও তার দলের পাঁচ জনকেও। জেরার সময় ছাড়া ওই ৬ জনের সঙ্গে বসতে বলা হয় রোদ্দুর রায়কে। তখনই নাকি রোদ্দুরের কীর্তি শুনে ঠাট্টা-মস্করা করেছিল সোনা পাপ্পু ও তার দলবল। লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ থেকে অভিযুক্তদের নিয়ে যাওয়া হয় সেন্ট্রাল লকআপে। একই ঘরে রাখা হয়েছিল রোদ্দুর ও পাপ্পুদের। পরের দিন পাপ্পু ও তার সঙ্গীরা গোয়েন্দা আধিকারিকদের জানান, প্রথম রাতে খাওয়াদাওয়ার পর ঘুমিয়েই পড়েছিলেন তাঁরা। হঠাইই রোদ্দুর রায় সোনা পাপ্পুকে ডাকতে থাকেন। ঘুম ভেঙে পাপ্পু চোখ মেলতেই রোদ্দুরের একগাল হাসি। সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই রোদ্দুর ঘুম থেকে ডাকতে শুরু করেন পাপ্পুর বাকি সঙ্গীদের। দু’একজন রোদ্দুরকে ধমকালেও তখন বেপরোয়া ভাব ইউটিউবারের। পাপ্পুদের রোদ্দুর বলেন, রাতটা ঘুমোনোর সময় নয়। জাগার সময়। রাত মানে গান গাওয়ার সময়। আনন্দ করার সময়। এরপরই চিৎকার করে হাততালি দিয়ে গান শুরু করেন রোদ্দুর। সেই গান পৌঁছয় অন্য ঘরগুলিতেও। প্রায় ভোররাত পর্যন্ত ‘গানের গুঁতো’ সহ্য করতে হয় পাপ্পু ও অন্য বন্দিদের।

তবে এখানেই থেমে থাকেননি রোদ্দুর রায়। অন্য দিনে শুরু করেছেন তাঁর জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতাও। তার জেরেই জেরবার বন্দিরা।রোদ্দুর রায়ের এ হেন অত্যাচারে ক্লান্ত হয়ে পাপ্পু ও তার সঙ্গীরা পুলিশ আধিকারিকদের অনুরোধ জানায়, তাদের অন্য ঘরে সরিয়ে নিতে। শেষে আদালতের নির্দেশে বড়তলা থানায় তাকে নিয়ে যাওয়ার পর হাঁফ ছেড়ে বাঁচে পাপ্পুরা। তবে কলকাতার ত্রাস সোনা পাপ্পুর কাছে এখন ত্রাস হয়ে উঠেছেন রোদ্দুর রায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − 7 =