বেআইনি পথে চাকরি হলে চাকরি যাবেই, জানালেন প্রাক্তন বিচারপতি

সম্প্রতি এসএসসি-র নিয়োগ-দুর্নীতি চলে এসেছে সাধারণ মানুষের চোখের সামনে। এরপরই বেআইনিভাবে নিয়োগ হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে কয়েক হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি বাতিলও হয়। হাইকোর্টের এদিন সেই রায়ের তীব্র বিরোধিতা করতে শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বেশ ক্ষুব্ধ হয়েই তিনি জানান, ‘আমি যদি অন্যায় করি, আপনারা আমার গালে দুটো চড় মারলেও কিছু মনে করব না। আমি জীবনে কখনও অন্যায় করিনি। আমরা ক্ষমতায় আসার পর একটা সিপিএম ক্যাডারের চাকরি খাইনি। তাহলে তোমরা কেন খাচ্ছ? দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কাড়বার ক্ষমতা আছে।’ এরই পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম তুলে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘একটি রায় দেখেছিলাম, চাকরি নিয়ে- একটি মামলায় উনি বলেছিলেন, সংশোধন করে নাও, যদি ভুল থাকে। চাকরি খাওয়ার কথা বলেননি। আর এখন রোজ কথায়-কথায় ৩-৪ হাজার চাকরি বাদ।’ এরপর বিষয়টি ভেবে দেখারও আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, ২০০৬ পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে ছিলেন অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষাতেই জানান, ‘এখন যে ধরনের নিয়োগ দুর্নীতি পশ্চিমবঙ্গে চলছে, সেরকম দুর্নীতি আগে মানুষ দেখেনি। ফলে মনে পড়ছে না, এরকম কোনও মামলা হয়ছে কি না, যার প্রেক্ষিতে এমন রায় দিয়েছি। তবে এটা হতে পারে, কোনও নিয়োগে কোনও পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল। আমি বলেছিলাম, ত্রুটিটা সংশোধন করে নাও। যাতে চাকরি না যায়। রোজ চাকরি গেলে তো মানুষ বিপদে পড়ে।’ এরই পাশাপাশি পদ্ধতিগত ত্রুটি আর বেআইনি নিয়োগ- দুটো আলাদা বলেও এদিন স্পষ্ট করে দেন প্রাক্তন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন বিচারপতি এও জানান, ‘যাঁরা চাকরি পেয়েছেন অথচ আইনি কোনও পদ্ধতি মানা হয়নি, সেখানে তো চাকরি যাবেই।’

এরই রেশ টেনে ১৯ দশকে বিহারের এক নিয়োগ-দুর্নীতির উদাহরণ তুলে ধরে প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ‘আমি এটা বিহারে করেছিলাম। ১৯৯৮-৯৯ সালে পাটনা হাইকোর্টে আমি বিচারপতি থাকাকালীন সময়ে তৎকালীন স্পিকার গোলাম সরওয়া ২৫০-৩০০ জনকে এভাবে কোনও নিয়ম মেনে চাকরি দিয়েছিলেন। সেই মামলা আমার কাছে এসেছিল। আমি বলেছিলাম, এদের চাকরিতে কোনও আইনি অধিকার নেই। এর শুনানির দরকার নেই। এদের চাকরি যাওয়া উচিত। তারপর তাদের চাকরি বাতিল হয়েছিল।’ একইসঙ্গে প্রাক্তন বিচারপতি এও মনে করিয়ে দেন, তখনকার রিপোর্টের ভিত্তিতে সেই রায় দেওয়া হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × two =